পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৪
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

করিলেন ও আকুল ভাবে প্রতাপাদিত্যের দুই হাত ধরিয়া কহিলেন, “বাবা প্রতাপ, ইহা কি কখনও সম্ভব?”

 প্রতাপাদিত্য একেবারে জ্বলিয়া উঠিয়া বলিলেন, “কেন সম্ভব নয়?”

 বসন্তরায় কহিলেন, “ছেলে মানুষ, অপরিণামদর্শী, সে কি তোমার ক্রোধের যোগ্যপাত্র?”

 প্রতাপাদিত্য বলিয়া উঠিলেন, “ছেলে মানুষ! আগুনে হাত দিলে হাত পুড়িয়া যায়, ইহা বুঝিবার বয়স তাহার হয় নাই! ছেলে মানুষ! কোথাকার একটা লক্ষ্মীছাড়া নির্ব্বোধ মূর্খ ব্রাহ্মণ, নির্ব্বোধদের কাছে দাঁত দেখাইয়া যে রোজগার করিয়া খায়, তাহাকে স্ত্রীলোক সাজাইয়া আমার মহিষীর সঙ্গে বিদ্রূপ করিবার জন্য আনিয়াছে;—এতটা বুদ্ধি যাহার যোগাইতে পারে, তাহার ফল কি হইতে পারে, সে বুদ্ধিটা আর তাহার মাথায় যোগাইল না! দুঃখ এই, বুদ্ধিটা যখন মাথায় যোগাইবে, তখন তাহার মাথাও তাহার শরীরে থাকিবে না।” যতই বলিতে লাগিলেন, তাঁহার শরীর আরও কাঁপিতে লাগিল, তাঁহার প্রতিজ্ঞা আরো দৃঢ় হইতে লাগিল, তাঁহার অধীরতা আরো বাড়িয়া উঠিল।

 বসন্তরায় মাথা নাড়িয়া কহিলেন, “আহা, সে ছেলে মানুষ! সে কিছুই বুঝে না!”

 প্রতাপাদিত্যের অসহ্য হইয়া উঠিল, তিনি বলিলেন,—“দেখ পিতৃব্য ঠাকুর, যশোহরের রায়বংশের কিসে মান অপমান হয়, সে জ্ঞান যদি তোমার থাকিবে, তবে কি ঐ পাকাচুলের উপর মোগল বাদশাহের, শিরোপা জড়াইয়া বেড়াইতে পার! বাদশাহের প্রসাদগর্ব্বে তুমি মাথা তুলিয়া বেড়াইতেছ বলিয়া প্রতাপাদিত্যের মাথা একেবারে নত হইয়া পড়িয়াছে। যবন-চরণের মৃত্তিকা তুমি কপালে ফোঁটা করিয়া পরিয়া থাক। তোমার ঐ যবনের পদধূলিময় অকিঞ্চিৎকর মাথাটা ধূলিতে লুটাইবার সাধ ছিল, বিধাতার বিড়ম্বনায় তাহাতে বাধা পড়িল। এই