পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

একাদশ পরিচ্ছেদ।

 বসন্তরায় যখন অন্তঃপুরে ফিরিয়া আসিলেন, তাঁহাকে দেখিয়া বিভা একেবারে কাঁদিয়া উঠিল। বসন্তরায় আর অশ্রু-সম্বরণ করিতে পারিলেন না, তিনি উদয়াদিত্যের হাত ধরিয়া কহিলেন, “দাদা, তুমি ইহার একটা উপায় করিয়া দাও।” রামচন্দ্র রায় একেবারে অধীর হইয়া উঠিলেন। তখন উদয়াদিত্য তাঁহার তরবারি হস্তে লইলেন। কহিলেন, “এস, আমার সঙ্গে সঙ্গে এস।” সকলে সঙ্গে সঙ্গে চলিল। উদয়াদিত্য কহিলেন—“বিভা তুই এখানে থাক্‌, তুই আসিস্ নে।” বিভা শুনিল না। রামচন্দ্র রায়ও কহিলেন—“না, বিভা সঙ্গে সঙ্গেই আসুক।” সেই নিঃস্তব্ধ রাত্রে সকলে পা টিপিয়া চলিতে লাগিল। মনে হইতে লাগিল বিভীষিকা চারিদিক্ হইতে তাহার অদৃশ্য হস্ত প্রসারিত করিতেছে। রামচন্দ্র রায় সম্মুখে পশ্চাতে পার্শ্বে দৃষ্টিপাত করিতে লাগিলেন। মামার প্রতি মাঝে মাঝে সন্দেহ জন্মিতে লাগিল। অন্তঃপুর অতিক্রম করিয়া বহির্দ্দেশে যাইবার দ্বারে আসিয়া উদয়াদিত্য দেখিলেন দ্বার রুদ্ধ। বিভা ভয়কম্পিত রুদ্ধকণ্ঠে কহিল, “দাদা, নীচে যাইবার দরজা হয় ত বন্ধ করে নাই। সেইখানে চল!” সকলে সেই দিকে চলিল। দীর্ঘ অন্ধকার সিঁড়ি বাহিয়া নীচে চলিতে লাগিল। রামচন্দ্র রায়ের মনে হইল, এ সিঁড়ি দিয়া নামিলে বুঝি আর কেহ উঠে না—বুঝি বাসুকী-সাপের গর্ত্তটা এইখানে, পাতালে নামিবার সিঁড়ি এই। সিঁড়ি ফুরাইলে দ্বারের কাছে গিয়া দেখিলেন দ্বার বন্ধ। আবার সকলে ধীরে ধীরে উঠিল। অন্তঃপুর হইতে বাহির হইবার যতগুলি পথ আছে সমস্তই বন্ধ। সকলে মিলিয়া দ্বারে দ্বারে ঘুরিয়া বেড়াইল, প্রত্যেক দ্বারে ফিরিয়া ফিরিয়া দুই তিন বার করিয়া গেল। সকলগুলিই বন্ধ।

 যখন বিভা দেখিল, বাহির হইবার কোন পথই নাই, তখন সে অশ্রু