করিলে সে যোড়হস্তে কহিল,—“যুবরাজ মাপ করুন—আজ রাত্রে অন্তঃপুর হইতে কাহারো বাহির হইবার হুকুম নাই।”
যুবরাজ কহিলেন—“সীতারাম, তবে কি তুমিও আমার বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করিবে? আচ্ছা তবে এস।” বলিয়া অসি নিষ্কাশিত করিলেন।
সীতারাম যোড়হস্তে কহিল, “না যুবরাজ আপনার বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করিতে পারিব না—আপনি দুইবার আমার প্রাণ রক্ষা করিয়াছেন।” বলিয়া তাঁহার পায়ের ধূলা মাথায় তুলিয়া লইল।
যুবরাজ কহিলেন, “তবে কি করিতে চাও, শীঘ্র কর—আর সময় নাই।”
সীতারাম কহিল—“যে প্রাণ আপনি দুইবার রক্ষা করিয়াছেন, এবার তাহাকে বিনাশ করিবেন না। আমাকে নিরস্ত্র করুন। এই লউন আমার অস্ত্র। আমাকে আপাদমস্তক বন্ধন করুন। নহিলে মহারাজের নিকট কাল আমার রক্ষা নাই।”
যুবরাজ তাহার অস্ত্র লইলেন, তাহার কাপড় দিয়া তাহাকে বাঁধিয়া ফেলিলেন। সে সেইখানে পড়িয়া রহিল, তিনি চলিয়া গেলেন। কিছু দূর গিয়া একটা অতি উচ্চ প্রাচীরের মত আছে। সে প্রাচীরের একটি মাত্র দ্বার, সে দ্বারও রুদ্ধ। সেই দ্বার অতিক্রম করিলেই একেবারে অন্তঃপুরের বাহিরে যাওয়া যায়। যুবরাজ দ্বারে আঘাত না করিয়া একেবারে প্রাচীরের উপর লাফ দিয়া উঠিলেন। দেখিলেন, একজন প্রহরী প্রাচীরে ঠেসান্ দিয়া দিব্য আরামে নিদ্রা যাইতেছে। অতি সাবধানে তিনি নামিয়া পড়িলেন। বিদ্যুদ্বেগে সেই নিদ্রিত প্রহরীর উপর গিয়া পড়িলেন। তাহার অস্ত্র কাড়িয়া দূরে ফেলিয়া দিলেন ও সেই হতবুদ্ধি অভিভূত প্রহরীকে আপাদমস্তক বাঁধিয়া ফেলিলেন। তাহার কাছে চাবি ছিল, সেই চাবি কাড়িয়া লইয়া দ্বার খুলিলেন। তখন প্রহরীর চৈতন্য হইল, বিস্মিত স্বরে কহিল—“যুবরাজ, করেন কি?”