পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৪
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ।

 প্রতাপাদিত্য ঘুম ভাঙিয়া উচ্চস্বরে ডাকিলেন “প্রহরি।” যখন প্রহরী আসিল না, তখন অবিলম্বে শয্যা ত্যাগ করিয়া তিনি বিদ্যুদ্বেগে ঘর হইতে বাহির হইয়া গেলেন। ডাকিলেন, “মন্ত্রী।” একজন ভৃত্য ছুটিয়া গিয়া অবিলম্বে মন্ত্রীকে অন্তঃপুরে ডাকিয়া আনিল।

 “মন্ত্রী, প্রহরীরা কোথায় গেল?”

 মন্ত্রী কহিলেন—"বহির্দ্বারের প্রহরীরা পলাইয়া গেছে।” মন্ত্রী দেখিলেন, মাথার উপরে বিপদ ঘনাইয়া আসিয়াছে। এই নিমিত্ত প্রতাপ আদিত্যের কথার স্পষ্ট, পরিষ্কার ও দ্রুত উত্তর দিলেন। যতই ঘুরাইয়া ও যতই বিলম্ব করিয়া তাঁহার কথার উত্তর দেওয়া হয়, ততই তিনি আগুন, হইয়া উঠিতে থাকেন।

 প্রতাপাদিত্য কহিলেন, “অন্তঃপুরের প্রহরীরা?”

 মন্ত্রী কহিলেন—“আসিবার সময় দেখিলাম তাহারা হাত পা বাঁধা পড়িয়া আছে।” মন্ত্রী রাত্রির ব্যাপার কিছুই জানিতেন না! কি হইয়াছে কিছু অনুমান করিতে পারিতেছেন না, অথচ বুঝিয়াছেন, একটা কি ঘােরতর ব্যাপার ঘটিয়াছে। সে সময়ে মহারাজকে কোন কথা জিজ্ঞাসা করা অসম্ভব।

 প্রতাপাদিত্য তাড়াতাড়ি বলিয়া উঠিলেন—“রামচন্দ্র রায় কোথায়? উদয়াদিত্য কোথায়? বসন্তরায় কোথায়?”

 মন্ত্রী ধীরে ধীরে কহিলেন, “বােধ করি তাঁহারা অন্তঃপুরেই আছেন!”

 প্রতাপাদিত্য বিরক্ত হইয়া কহিলেন, “বােধ ত আমিও করিতে পারিতাম! তােমাকে জিজ্ঞাসা করিলাম কি করিতে! যাহা বােধ করা যায় তাহা সকল সময়ে সত্য হয় না!”

 মন্ত্রী কিছু না বলিয়া ধীরে ধীরে বাহির হইয়া গেলেন। রমাপতির