পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৮
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

তােকে বাঁধিয়াছে, তুই আমার নাম করিস্। প্রতাপ জানে, এক কালে বসন্তরায় বলিষ্ঠ ছিল, সে তাের কথা বিশ্বাস করিবে।”

 সীতারাম, প্রতাপাদিত্যের কাছে কি জবাব দিবে, এতক্ষণ ধরিয়া তাহাই ভাবিতেছিল। এ সম্বন্ধে উদয়াদিত্যের নাম করিতে কোন মতেই তাহার মন উঠিতেছিল না। সে একটা বাঁকা পা তিনচোখো তালবৃক্ষাকৃতি ভূতকে আসামী করিবে বলিয়া একবার স্থির করিয়াছিল, কিন্তু বসন্তরায়কে পাইয়া নিরপরাধ ভূতটাকে খালাস দিল। বসন্তরায়ের কথায় সে তৎক্ষণাৎ রাজি হইল। তখন তিনি দ্বিতীয় প্রহরীর নিকট গিয়া কহিলেন, “ভাগবত, প্রতাপ জিজ্ঞাসা করিলে বলিও বসন্তরায় তােমাকে বাঁধিয়াছে।” সহসা ভাগবতের ধর্ম্মজ্ঞান অত্যন্ত প্রবল হইয়া উঠিল, অসত্যের প্রতি নিতান্ত বিরাগ জন্মিল; তাহার প্রধান কারণ, উদয়াদিত্যের প্রতি সে ভারি ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিয়াছিল।

 ভাগবত কহিল, “এমন কথা আমাকে আদেশ করিবেন না, ইহাতে আমার অধর্ম্ম হইবে।”

 বসন্ত তাহার কাঁধে হাত দিয়া কহিলেন, “ভাগবত আমার কথা শুন; ইহাতে কোন অধর্ম্ম নাই। সাধু লােকের প্রাণ বাঁচাইতে মিথ্যা কথা বলিতে যদি কোন অধর্ম্ম থাকিবে, তবে আমি কেন তােমাকে এমন অনুরােধ করিব?” বসন্তরায় তাহার কাঁধে হাত দিয়া পিঠে হাত দিয়া বার বার করিয়া বুঝাইতে চেষ্টা করিলেন, ইহাতে কোন অধর্ম্ম নাই। কিন্তু লােকের যখন ধর্ম্মজ্ঞান সহসা বিশেষ প্রবল হইয়া উঠে, তখন কোন যুক্তিই তাহার কাছে খাটে না। সে কহিল, “না, মহারাজ, মনিবের কাছে মিথ্যা কথা বলিব কি করিয়া!”

 বসন্তরায় বিষম অস্থির হইয়া উঠিলেন; ব্যাকুলভাবে কহিলেন, “ভাগবত, আমার কথা শুন, আমি তােমাকে বুঝাইয়া বলি, এ মিথ্যা কথায় কোন পাপ নাই। দেখ বাপু, আমি তােমাকে পরে খুব খুসী