পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮০
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

 বসন্তরায় তাড়াতাড়ি বলিয়া উঠিলেন “হাঁ হাঁ সীতারাম, কি কহিলি? অধর্ম্ম করিস্‌নে, সীতারাম, ভগবান্ তাের পরে সন্তুষ্ট হইবেন। উদয়াদিত্যের ইহাতে কোন দোষ নাই।”

 সীতারাম তাড়াতাড়ি বলিয়া ফেলিল, “আজ্ঞা না, যুবরাজের কোন দোষ নাই।”

 প্রতাপাদিত্য দৃঢ় স্বরে কহিলেন “তবে তাের দোষ?”

 সীতারাম কহিল “আজ্ঞা না।”

 “তবে কার দোষ?”

 “আজ্ঞা যুবরাজ—”

 ভাগবতকে যখন জিজ্ঞাসা করা হইল, তখন সে সমস্ত কথা ঠিক করিয়া কহিল, কেবল সে যে ঘুমাইয়া পড়িয়াছিল সেইটে গােপন করিল। বৃদ্ধ বসন্তরায় চারিদিক ভাবিয়া কোন উপায় দেখিলেন না। তিনি চোখ বুজিয়া মনে মনে দুর্গা দুর্গা কহিলেন। প্রহরীদ্বয়কে তৎক্ষণাৎ কর্ম্মচ্যুত করা হইল। তাহাদের অপরাধ এই যে তাহাদের যদি বলপূর্ব্বক বাঁধিতে পারা যায় তবে তাহারা প্রহরী-বৃত্তি করিতে আসিয়াছে কি বলিয়া? এই অপরাধের জন্য তাহাদের প্রতি কশাঘাতের আদেশ হইল।

 তখন প্রতাপাদিত্য বসন্তরায়ের মুখের দিকে চাহিয়া বজ্রগম্ভীর স্বরে কহিলেন, “উদয়াদিত্যের এ অপরাধের মার্জ্জনা নাই।” এমনি ভাবে বলিলেন যেন উদয়াদিত্যের সে অপরাধ বসন্তরায়েরই। যেন তিনি উদয়াদিত্যকে সম্মুখে রাখিয়াই ভর্ৎসনা করিতেছেন। বসন্তরায়ের অপরাধ, তিনি উদয়াদিত্যকে প্রাণের অধিক ভালবাসেন।

 বসন্তরায় তাড়াতাড়ি কহিয়া উঠিলেন “বাবা প্রতাপ, উদয়ের ইহাতে কোন দোষ নাই।”

 প্রতাপাদিত্য আগুন হইয়া কহিলেন “দোষ নাই? তুমি দোষ নাই