পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮২
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

পাঠাইতে হইবে।” বিভার প্রতি প্রতাপাদিত্যের কোন আশঙ্কা হয় নাই; হাজার হউক, সে বাড়ির মেয়ে!


ত্রয়ােদশ পরিচ্ছেদ।

 বসন্তরায় উদয়াদিত্যের ঘরে আসিয়া কহিলেন, “দাদা তাের সঙ্গে আর দেখা হইবে না।” বলিয়া উদয়াদিত্যকে বৃদ্ধ দুই হাতে জড়াইয়া ধরিলেন।

 উদয়াদিত্য বসন্তরায়ের হাত ধরিয়া কহিলেন, “কেন দাদামহাশয়?”

 বসন্তরায় সমস্ত বলিলেন। কাঁদিয়া কহিলেন, “ভাই, তােকে আমি ভালবাসি বলিয়াই তাের এত দুঃখ। তা, তুই যদি সুখে থাকিস্ ত এক’টা দিন আমি একরকম কাটাইয়া দিব।”

 উদয়াদিত্য মাথা নাড়িয়া কহিলেন, “না, তাহা কখনই হইবে না। তােমাতে আমাতে দেখা হইবেই। তাহাতে কেহ বাধা দিতে পারিবে না। তুমি গেলে দাদামহাশয়, আমি আর বাঁচিব না।”

 বসন্তরায় ব্যাকুল হইয়া কহিলেন, “প্রতাপ আমাকে বধ করিল না, তােকে আমার কাছ হইতে কাড়িয়া লইল। দাদা, আমি যখন চলিয়া যাইব, আমার পানে ফিরিয়া চাহিস্‌নে, মনে করিস্‌ বসন্তরায় মরিয়া গেল!”

 উদয়াদিত্য শয়নকক্ষে সুরমার নিকটে গেলেন। বসন্তরায় বিভার কাছে গিয়া বিভার চিবুক ধরিয়া কহিলেন, “বিভা দিদি আমার, একবার ওঠ্! বুড়ার এই মাথাটায় একবার ঐ হাত বুলাইয়া দে।” বিভা উঠিয়া বসিয়া দাদা মহাশয়ের মাথা লইয়া পাকা চুল তুলিয়া দিতে লাগিল।

 উদয়াদিত্য সুরমাকে সমস্ত কহিলেন ও বলিলেন,—“সুরমা, পৃথিবীতে আমার যাহা কিছু অবশিষ্ট আছে তাহাই কাড়িয়া লইবার জন্য যেন একটা