পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
৮৩

যড়যন্ত্র চলিতেছে।” সুরমার হাত ধরিয়া কহিলেন—“সুরমা, তােমাকে যদি কেহ আমার কাছ হইতে ছিনিয়া লইয়া যায়?”

 সুরমা দৃঢ়ভাবে উদয়াদিত্যকে, আলিঙ্গন করিয়া দৃঢ়স্বরে কহিল, “সে যম পারে, আর কেহ পারে না।”

 সুরমার মনেও অনেকক্ষণ ধরিয়া সেইরূপ একটা আশঙ্কা জন্মিতেছে। সে যেন দেখিতে পাইতেছে একটা কঠোর হস্ত তাহার উদয়াদিত্যকে তাহার কাছ হইতে সরাইয়া দিবার জন্য অগ্রসর হইতেছে। সে মনে মনে উদয়াদিত্যকে প্রাণপণে আলিঙ্গন করিয়া ধরিল, মনে মনে কহিল, “আমি ছাড়িব না, আমাকে কেহ ছাড়াইতে পারিবে না।”

 সুরমা আবার কহিল, “আমি অনেকক্ষণ হইতে ভাবিয়া রাখিয়াছি আমাকে তােমার কাছ হইতে কেহই লইতে পারিবে না।”

 সুরমা ঐ কথা বার বার করিয়া বলিল। সে মনের মধ্যে বল সঞ্চয় করিতে চায়, যে বলে সে উদয়াদিত্যকে দুই বাহু দিয়া এমন জড়াইয়া থাকিবে যে, কোন পার্থিব শক্তি তাহাদের বিচ্ছিন্ন করিতে পারিবে না। বার বার ঐ কথা বলিয়া মনকে সে বজ্রের বলে বাঁধিতেছে।

 উদয়াদিত্য সুরমার মুখের দিকে চাহিয়া নিশ্বাস ফেলিয়া কহিলেন সুরমা, দাদামহাশয়কে আর দেখিতে পাইব না!”

 সুরমা নিশ্বাস ফেলিল।

 উদয়াদিত্য কহিলেন, “আমি নিজের কষ্টের জন্য ভাবি না সুরমা,—কিন্তু দাদামহাশয়ের প্রাণে যে বড় বাজিবে। দেখি, বিধাতা আরো কি করেন। তাঁর আরও কি ইচ্ছা আছে!”

 উদয়াদিত্য বসন্তরায়ের কত গল্প করিলেন।

 বসন্তরায় কোথায় কি কহিয়াছিলেন, কোথায় কি করিয়াছিলেন সমুদায় তাঁহার মনে পড়িতে লাগিল। বসন্তরায়ের করুণ হৃদয়ের কত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজ, কত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কথা, তাঁহার স্মৃতির ভাণ্ডারে ছােট ছােট