পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ডেঞে পিঁপ্‌ড়ের মন্তব্য

খাবো। এবং বিবরেও বাস ক’র্‌বো। তৃতীয়, আমাদের প্রিয় ডাঁই ভূমি ত্যাগ ক’রে আস্‌তে হবে, সেইজন্য সেই দুঃখ-নিবারণের জন্য শর্করা কিছু অধিক পরিমাণে খাওয়া আবশ্যক। চতুর্থ, বিদেশে বিজাতির মধ্যে বিচরণ ক’র্‌তে হবে, নানা রোগ হ’তে পারে—তা’হলে বোধ করি, আমরা বেশি দিন বাঁচ্‌বো না—হায় আমাদের কী শোচনীয় অবস্থা! অতএব শর্করা পেতেই হবে, এবং বিবরেও যতটা স্থান আছে সমস্ত আমরা এবং আমাদের শ্যালকেরা মিলে ভাগাভাগি ক’রে নেবো।

 পিঁপড়েরা যদি আপত্তি করে—তবে তাদের ব’ল্‌বো অকৃতজ্ঞ। যদি তা’রা শর্করা খেতে এবং বিবরে স্থান পেতে চায় তবে ডাঁই ভাষায় তাদের স্পষ্ট ব’ল্‌বো তোমরা পিঁপড়ে, ক্ষুদ্র, তোমরা পিপীলিকা। চেয়ে আর প্রবল যুক্তি কী আছে!

 তবে পিঁপড়েরা খাবে কী? তা জানিনে। হয়তো আহার এবং বাসস্থানের অকুলান হ’তেও পারে, কিন্তু এটা তাদের ধৈর্য্য ধ’রে বিবেচনা করা উচিত যে, আমাদের দীর্ঘপদস্পর্শে ক্রমে তাদের পদবৃদ্ধি হবার সম্ভাবনা আছে। শৃঙ্খলা এবং শান্তির কিছুমাত্র অভাব থাক্‌বে না। তা’রা ক্রমিক উন্নতি লাভ করুক্‌ এবং আমরা ক্রমিক শর্করা খাই, এম্‌নি এক্‌টা বন্দোবস্ত থাক্‌লে তবেই শৃঙ্খলা এবং শান্তিরক্ষা হবে, না হ’লে তুমুল বিবাদের আটক কী? মাথায় গুরুভার প’ড়লে এতোই বিবেচনা ক’রে চল্‌তে হয়!

 শর্করাভাবে এবং অতিরিক্ত শান্তি ও শৃঙ্খলার ভারে যদি পিঁপড়েজাতি মারা পড়ে? তা হলে আমরা অন্যত্র উন্নতি প্রচার কর্‌তে যাবো—কারণ আমরা ডেঞে জাতি; উচ্চ পদের প্রভাবে অত্যন্ত উন্নত।