পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
ব্যঙ্গকৌতুক

আমি মূর্খ―আমি কুসংস্কারাচ্ছন্ন, তাই, ভাই, আমি বিশ্বাস করি, প্রাচীন ভারতে গ্যাল্‌ভ্যানিক ব্যাটারি ছিল এবং অক্সিজেন্ বাষ্পের অস্তিত্বও অবিদিত ছিল না। কেন বিশ্বাস করি? আগে নিষ্ঠার সহিত কুর্ম্ম, কল্কি ও স্কন্দপুরাণ পাঠ করো, গো এবং ব্রাহ্মণের প্রতি ভক্তি স্থাপন করাে, ম্লেচ্ছের অন্ন যদি খাইতে ইচ্ছা হয় তো গােপনে খাইয়া সমাজে অস্বীকার করো, যতটুকু নব্য শিক্ষা হইয়াছে সম্পূর্ণ ভুলিয়া যাও, তবে বুঝিতে পারিবে, কেন বিশ্বাস করি! আজ তােমাকে যাহা বলিব, তুমি হাসিয়া উড়াইয়া দিবে। আমার যুক্তি তােমার কাছে অজ্ঞের প্রলাপ বলিয়া প্রতীয়মান হইবে।

 তবু একবার জিজ্ঞাসা করি, কীটে যতটা খাইয়াছে এবং মুসলমানে যতটা ধ্বংস করিয়াছে, তাহার কি একটা হিসাব আছে! যে পাপিষ্ঠ যবন ভারতের পবিত্র স্বাধীনতা নষ্ট করিয়াছে, ভারতের গ্যাল্‌ভ্যানিক ব্যাটারির প্রতি যে তাহারা মমতা প্রদর্শন করিবে, ইহাও কি সম্ভব! যে ম্লেচ্ছগণ শত শত আর্য্যসন্তানের পবিত্র মস্তক উষ্ণীষ ও শিখা সমেত উড়াইয়া দিয়াছিল, তাহারা যে আমাদের পবিত্র দেবভাষা হইতে অক্সিজেন্ বাষ্পটুকু উড়াইয়া দিবে, ইহাতে কিছু বিচিত্র আছে?

 এই তাে গেল প্রথম যুক্তি। দ্বিতীয় যুক্তি এই যে, যদি যবনগণের দ্বারাই গ্যাল্‌ভ্যানিক ব্যাটারি ও অক্সিজেনের প্রাচীন নাম লােপ না হইবে, তবে তাহা গেল কোথায়—তবে কোথাও তাহার কোনাে চিহ্ন দেখা যায় না কেন? প্রাচীন শাস্ত্রে এতো শত ঋষি মুনির নাম আছে, তন্মধ্যে গল্বন ঋষির নাম বহু গবেষণাতেও পাওয়া যায় না কেন? যে পবিত্র ভারতে দধীচি বজ্রনির্ম্মাণের জন্য নিজ অস্থি ইন্দ্রকে দান করিয়াছেন, ভীমসেন গদাঘাতের দ্বারা জরাসন্ধকে নিহত করিয়াছেন, এবং জহ্নুমুনি গঙ্গাকে এক গণ্ডূষে পান করিয়া জানু দিয়া নিঃসারিত করিয়াছেন, যে ভারতে ঋষিবাক্যপালনের জন্য বিন্ধ্য পর্বত আজিও