পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
লেখার নমুনা
১৫

দু’খানা হইয়া ভাঙিয়া যা মা, সন্তানের লজ্জা নিবারণ কর্ জননি! ভাই বঙ্গবাসী, বুঝিয়াছ কি, কোন্ কলঙ্কের কথা, কোন্ লাঞ্ছনার কথা, কোন্ দুঃসই লজ্জার কথা বলিতেছি, ব্যক্ত করিতেছি, প্রকাশ করিতে গিয়া কণ্ঠ রুদ্ধ হইয়া যাইতেছে? না, বােঝ নাই, তােমরা বুঝিবে কেন ভাই! তােমরা মিল্ বােঝ, স্পেন্সর বােঝ, তােমরা শেলির আধ-আধ ছায়া-ছায়া ভাঙা-ভাঙা কবিত্ব বােঝ, তােমরা গরিবের কথা বুঝিবে কেন, দরিদ্রের কথা শুনিবে কেন, এ অকিঞ্চনের ভাষা তােমাদের কানে যাইবে কেন?” কিন্তু ভাই একটি প্রশ্ন আছে, একটি কথা জিজ্ঞাসা করিব, গুণমণি, ঐ মুখের একটি উত্তর শুনিতে চাই—আচ্ছা ভাই, পরের কথা বোঝ, আর আপনার লােকের কথা বােঝ না, বাহিরের কথা বােঝ, আর ঘরের কথা বুঝিতে পার না, যে আপনার নয়, তাহার কথা বােঝ, যে আপনার, তাহার কথা বােঝ না? বােঝ না তাহাতেও দুঃখ নাই, তাহাতেও খেদ নাই, তাহাতেও তিলার্দ্ধমাত্র শােকের কারণ নাই, কিন্তু ভাই, কথাটা যে একেবারে হৃদয়ঙ্গমই হয় না, একেবারে যেন অবােধের মতাে বসিয়া থাক। সেই তো আমাদের দুর্দশা, সেই তাে আমাদের দুরদৃষ্ট! ভাই বাঙ্গালি, জিজ্ঞাসা করিতে পার বটে, যে কথা আজিকার দিনে কেহ বুঝিবে না, সে কথা তুলিলে কেন, উত্থাপন করিলে কেন? যে কথা সবাই ভুলিয়াছে, সে কথা মনে করাইয়া দাও কেন? যে দুর্ব্বিষহ বেদনা, যে দুঃসহ ব্যথা, যে অসহ্য যন্ত্রণা নাই, তাহাতে আঘাত দাও কেন? আমিও তাে সেই কথা. বলি ভাই! এই ভাঙা মন্দিরে এই ভাঙা কণ্ঠের প্রতিধ্বনি কেন তুলি! এই শ্মশানের চিতানলে আবার কেন নূতন করিয়া নয়নজল নিক্ষেপ করি! আর্য্য জননীর সমাধিক্ষেত্রে এই ঊনবিংশ শতাব্দীর সভ্যশাসিত সভ্যচালিত নব সভ্যতার দিনে আবার কেন নূতন করিয়া নীরবতার তরঙ্গ উত্থিত করি! কেন করি! তােমরা কী করিয়া বুঝিবে ভাই, কেন করি! তুমি যে ভাই সত্য, তুমি কী করিয়া বুঝিবে কেন করি! তুমি যে ভাই