পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪
ব্যঙ্গকৌতুক

 শীতল সমীরণে সমস্ত জগতের তাপ নিবারণ করে, কেবল আমি হতভাগিনী সখীকে ডাকিয়া বলি “উঁহু উঁহু, সখি, দ্বার রােধ করিয়া দাও।”

 সখীরা স্নেহভরে দেহ স্পর্শ করিলে চমকিয়া হাত ঠেলিয়া দিই। না জানি কোন্ স্পর্শে আরাম পাইব!

 মনােহরা শারদ পূর্ণিমা কাহার না আনন্দদায়িনী—কেবল আমার কষ্ট কেন দ্বিগুণ বাড়াইয়া তােলে!

 আমার ন্যায় আর কোনাে হতভাগিনী সম্বন্ধে জয়দেব লিখিয়াছেন,―

“নিন্দতি চন্দনমিন্দুকিরণমনুবিন্দতি খেদমধীরং।
ব্যালনিলয়মিলনেন গরলমিব কলরতি মলয়সমীরং।”

 অন্যত্র লিখিয়াছেন “নিশি নিশি রুজমুপযাতি।” আমারো সেই দশা। রাত্রেই বাড়িয়া উঠে।

 আমার এ কী হইল?

উত্তর।

 তােমার বাত হইয়াছে। অতএব পূবে হাওয়া বহিলে যে দ্বাররােধ করিয়া দাও সেটা ভালােই কর। পরীক্ষাস্বরূপে চন্দনপঙ্ক লেপন না করিলেই উত্তম করিতে। পূর্ণিমার সময় যে বেদনা বাড়ে সে তােমার একলার নহে, রােগটার ঐ এক লক্ষণ। চাঁদের সহিত বিরহ, বাত, পয়ার এবং জোয়ার ভাঁটার একটা যােগ আছে।

 রাধিকার ন্যায় রাত্রে তােমার রােগ বৃদ্ধি হয়। কিন্তু রাধিকার সময় ভালো ডাক্তার ছিল না, তােমার সময়ে ডাক্তারের অভাব নাই। অতএব আমার ঠিকানা সম্পাদকের নিকট জানিয়া লইয়া অবিলম্বে চিকিৎসা আরম্ভ করিয়া দিবে।

নূতন উত্তীর্ণ ডাক্তার।

 ১২৯৮।