পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রাচীন দেবতার নূতন বিপদ
৩১

কিন্তু তাহা হইলে তাহাদের কল্পনাশক্তি ও প্রতিভার খর্ব্বতা স্বীকার করা হয় বলিয়া ক্ষান্ত আছে। হরি হরি, এই দীর্ঘ জীবনে ঐ দুটো বই আর কোনাে দুষ্কর্ম্ম করি নাই ইহাতেই এতো কথা শুনিতে হইল!

 “যাহা হৌক্ এ তাে গেল আমার আক্ষেপের কথা। কিন্তু তােমরা কী মনোদুঃখে, মর্ত্ত্যলােকের প্রতি কী অভিমানে তােমাদের বহুকালের পদ পরিত্যাগ করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছ?”

 তখন দেবতারা কেহ বা বৈদিক, কেহ বা পৌরাণিক ভাষায়, কেহ বা ত্রিষ্টুভ্, কেহ বা অনুষ্ঠুভ্, ছন্দে, দন্ত্য ন মূর্দ্ধন্য ণ, অন্তঃস্থ ব বর্গীয় ব এবং তিন সয়ের উচ্চারণ রক্ষা করিয়া বলিলেন―“ভগবন্, সায়ান্স্ নামক একটা দানব অত্যন্ত জুলুম আরম্ভ করিয়াছে। ইহার নিকটে বৃত্র প্রভৃতি প্রাচীন অসুরদিগকে গণ্যই করি না!”

 বৃদ্ধ পিতামহ মনে মনে হাসিলেন, ভাবিলেন, কোনো মতে মানে মানে তাহার হাত হইতে উদ্ধার পাইয়াছ এখন তাহাকে গণ্য না করিলেও চলে, কিন্তু তখন যে নাকালটা হইয়াছিলে সে বেশ মনে আছে— কিন্তু, সে কথা আর উত্থাপন না করিয়া গম্ভীরভাবে চারিটি মস্তক নাড়িয়া কহিলেন, “অবশ্য অবশ্য!”

 সুরগুরু বৃহস্পতি কহিলেন, “আর্য্য, শত্রুটাকে ততাে ডরাই না, কিন্তু মিত্রদের উপদ্রবে অতিষ্ঠ হইয়াছি। এতােদিন আমরা ছিলাম মানুষের হৃদয়লােকে বিশ্বাসের স্বর্গধামে; এখন তাহারা সায়ান্সের সহিত গােপনে সন্ধি স্থাপনপূর্ব্বক সেখান হইতে নির্ব্বাসিত করিয়া আমাদিগকে মাথার খুলির এক কোণে অত্যন্ত শুষ্ক সঙ্কীর্ণ জায়গায় একটুখানি স্থান দিতে চায়। সেখানে একফোঁটা বিশ্বাসের অমৃত নাই। বলে, ‘দেখাে, তােমাদের কতো গৌরব বাড়িল! ছিলে অজ্ঞানান্ধ হৃদয়গহ্বরে, এখন উঠিলে মস্তিষ্কঘৃতজ্বালিত জ্ঞানালােকিত মস্তকচূড়ায়! ভাগ্যে আমরা কয়জনা, বুদ্ধিমান ছিলাম, নতুবা স্বর্গে মর্ত্যে কোথাও তােমাদের স্থান হইত না!