পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২
ব্যঙ্গকৌতুক

আমরা সকলের কাছে প্রমাণ করিয়াছি যে, তােমরা আর কোথাও যদি না থাক, নিদেন, আমাদের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার মধ্যে আছ―প্রতিবাদ করিয়া সেখান হইতে তােমাদিগকে বিচলিত করে এমন বুদ্ধিমান এখনো কেহ জন্মগ্রহণ করে নাই। বিষ্ণুর মীন কূর্ম্ম বরাহ প্রভৃতি অবতারগুলিকে আমরা এভােল্যুশন থিওরি বলিয়া প্রচার করিয়াছি! দেবতাদের উদ্ধারের জন্য আমরা এতো প্রাণপণ চেষ্টা করিতেছি!

 “ভগবন্, যথার্থ আন্তরিক ভক্তি কখনই নিজের দেবতাকে লইয়া এরূপ ছেলে ভুলাইবার চেষ্টা করেন না। দেব চতুরানন, এতোকাল দেবতা ছিলাম, কেবল মাঝে মাঝে দৈত্যদের উপদ্রবে স্বর্গছাড়া হইয়াছি, কিন্তু এ পর্য্যন্ত আমাদিগকে কেহ এভােল্যুশন্ থিওরি করিয়া দেয় নাই। প্রভু, তুমি যদি আমাদিগকে সৃষ্টি করিয়া থাক তুমি জান আমরা কী, কিন্তু আজকাল তােমার অপেক্ষা যাহারা কিঞ্চিৎ বেশি শিখিয়াছে তাহাদের হাত হইতে আমাদিগকে রক্ষা করো! বড়ো আশা দিয়াছিলে তােমার দেবতারা অমর, কিন্তু এই ভাবে যদি কিছুদিন চলে, আমাদের মানববন্ধুরা যদি সাংঘাতিক স্নেহভরে আরাে কিছুকাল আমাদের ব্যাখ্যা করিতে থাকেন, তবে সে আশা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হইবে।”

 বৃহস্পতির মুখে এই সমস্ত সংবাদ শ্রবণ করিয়া পিতামহ ব্রহ্মা আর উত্তর করিতে পারিলেন না, চারিটি শুভ্র মস্তক নত করিয়া চিন্তিতভাবে বসিয়া রহিলেন।

 তখন দেবতাগণ স্ব স্ব পদ সম্বন্ধে পরিবর্ত্তন প্রার্থনা করিলেন। বিজ্ঞ দেবতা প্রজাপতি এবং বালক-দেবতা কন্দর্প সুরসভায় দাঁড়াইয়া কহিলেন, “সকলেই জানেন, বিবাহ-ডিপার্টমেণ্টে বহুকাল আমাদের কিঞ্চিৎ কর্ত্তৃত্ব ছিল; সেজন্য আমাদের কোনােরূপ নিয়মিত নৈবেদ্য অথবা উপ্‌রি পাওনা ছিল না বটে, কিন্তু কৌতুক যথেষ্ট ছিল। সম্প্রতি টাকা নামক একটা চক্রমুখো হঠাৎদেবতা টঙ্কশালা হইতে নিষ্কলঙ্ক পূর্ণচন্দ্রাকারে আবির্ভূত