পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
ব্যঙ্গকৌতুক

হারায় যদি তাে তাের দুখানা হাড় আস্ত রাখ্‌বো না, তা জানিস্! সেদিন যে তাের হাতে দিয়ে ব’লে দিলুম আল্‌মারীর ভিতর তুলে রেখে দিস্! পাজি বেটা, নচ্ছার বেটা! হারামজাদা বেটা! কোথায় আমার কাগজ হারালি বের ক’রে দে! দে বের ক’রে! যেখান থেকে পাস্ নিয়ে আয় নইলে তােকে পুঁতে ফেল্‌বো বেটা!-ওঃ, তাই বটে, আমার ক্যাশবাক্সের ভিতরে তুলে রেখেছিলুম। ওহে হরিভূষণ, পড়ে শুনিয়ে দাও তাে, আমার আবার বাংলা পড়াটা ভালো অভ্যেস নেই।—কে গা? মতি গয়লানী বুঝি? তা এসো এসাে—আমি পায়ের ধূলো দিচ্চি—দুধের দা ম নিতে এসেচো?—এখনো শােনাে নি বুঝি? নন্দ মুখুয্যেকে মা গঙ্গা কী স্বপন দিয়েছেন সে সব খবর রাখো না! বেটি, তুই আমার পুকুরের জল দুধের সঙ্গে মিশিয়ে আমাকে বিক্রি ক’রেচিস্ —সে জলের মাহাত্ম্য জানিস্? কেমন? সবার কাছে কথাটা শুন্‌লি তো? এখন হিসেবটা রেখে পায়ের ধূলাে নিয়ে আমার খিড়কির ঘাটে চট ক’রে একটা ডুব দিয়ে আয়গে যা!—

 এই এখনি যাচ্চি। বেলা হয়েছে সে কি আর জানিনে? ঠাণ্ডা হ’য়ে গেল? তা কী ক’ব্ব বলাে? লােকজন সব অনেক দূর থেকে একটু পায়ের ধূলাের প্রত্যাশায় এসেছে, এরা কি সব নিরাশ হ’য়ে যাবে? আচ্ছ। উঠি। ওরে তিনকড়ে তুই এখানে হাজির থাকিস্— যারা আমাকে দেখতে আস্‌বে সব বসিয়ে রাখিস্ আমি এলুম ব’লে। খবরদার দেখিস্ যেন কেউ দর্শন না পেয়ে ফিরে না যায়! বলিস্ ভগীরথ ঠাকুরের ভােগ হ’চ্চে। বুঝলি? আমি দুটো ভাত মুখে দিয়েই এলুম ব’লে।

 রেধো, তুই যে একেবারে সীধে খাড়া হ’য়ে দাঁড়িয়ে রইলি? তাের কি মাথা নােয় না না কি? তাের তাে ভারি অহঙ্কার দেখচি! বেটা তাের ভক্তির লেশমাত্র নেই! পাজি বেটা তােকে জুতাে মেরে বিদায়