পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬
ব্যঙ্গকৌতুক

অধিকাংশ আনন্দই বৃদ্ধি পাইয়া থাকে সন্দেহ নাই কিন্তু রমণীর অনুগ্রহ সে জাতীয় নহে।

 চন্দ্র। ভগবন্, তবে সে আনন্দ তুমিই সম্পূর্ণ গ্রহণ করো। তুমি সুরশ্রেষ্ঠ, এ সুখাবেগ তুমি ব্যতীত আর কেহ একাকী সম্বরণ করিতে পারিবে না।

 ইন্দ্র। প্রিয়সখে, অন্যের নিকট যাহা পাওয়া যায় তাহা বন্ধুকে দান করা কঠিন নহে; কিন্তু প্রেম সেরূপ সামগ্রী নহে; তুমি যাহা পাইয়াছ তাহা তুমি অনাদরে ফেলিয়া দিতে পার কিন্তু প্রিয়তম বন্ধুর অত্যাবশ্যক পূরণ করিবার জন্যও তাহা দান করিতে পার না।

 চন্দ্র। যদি ফেলিয়া দিতে পারিতাম, তবে, বিপন্নভাবে তােমার দ্বারস্থ হইতাম না। সুরপতে, অনেক সৌভাগ্য আছে যাহা দূরে নিক্ষেপ করিলেও নিকটে সংলগ্ন হইয়া থাকে।

 ইন্দ্র। শশলাঞ্ছন, তুমি কি অপযশের ভয় করিতেছ?

 চন্দ্র। সখে, সত্য বলিতেছি কলঙ্কের ভয় আমার নাই।

 ইন্দ্র। কলানাথ, তবে কি তুমি তােমার অন্তঃপুরলক্ষ্মী প্রিয়তমার অসূয়া আশঙ্কা করিতেছ?

 চন্দ্র। বন্ধো, তােমার অবিদিত নাই, সপ্তবিংশতি নক্ষত্রনারী লইয়া আমার অন্তঃপুর। তাহারা প্রত্যেকেই সমস্ত রাত্রি অনিমেষ নেত্রে জাগ্রত থাকিয়া আমার গতিবিধি নিরীক্ষণ করিয়া থাকে, তথাপি এপর্য্যন্ত নক্ষত্রলােকে কোনােরূপ অশান্তির কারণ ঘটে নাই। সপ্তবিংশতির উপর আর একটি যােগ করিতে আমি ভীত নহি।

 ইন্দ্র। সখে, ধন্য তােমার সাহস! তবে তােমার ভয় কিসের?

শশব্যস্ত হইয়া দেবদূতের প্রবেশ

 দূত। জয়ােস্তু। দেবরাজ, বাণী বীণাপাণি স্বর্গপরিত্যাগের কল্পনা করিতেছেন।