পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



ডেঞে পিঁপ্‌ড়ের মন্তব্য

 দেখো দেখো, পিঁপ্ড়ে‌ দেখো! ক্ষুদে ক্ষুদে রাঙা রাঙা সরু সরু সব আনাগোনা করিতেছে—ওর সব পিঁপ্ড়ে‌ যা’কে সংস্কৃত ভাষায় বলে পিপীলিকা। আমি হচ্চি ডেঞে, সমুচ্চ ডাঁইবংশসম্ভূত, ঐ পিঁপ্ড়েগুলোকে দেখলে আমার অত্যন্ত হাসি আসে!

 হা হা হা, রকম দেখো, চল্‌চে দেখো, যেন ধূলোর সঙ্গে মিশিয়ে গেচে; আমি যখন দাঁড়াই তখন আমার মাথ আকাশে ঠেকে; সূর্য্য যদি মিছ্‌রির টুক্‌রে। হ’তো আমার মনে হয় আমি দাঁড়া বাড়িয়ে ভেঙে ভেঙে এনে আমার বাসায় জমিয়ে রাখ্তে‌ পারতুম। উঃ, আমি এতো বড়ো একটা খড় এতোখানি রাস্তা টেনে এনেচি, আর ওরা দেখে কী ক’রচে—একটা মরা ফড়িং নিয়ে তিন জনে মিলে টানাটানি ক’রচে! আমাদের মধ্যে এতো ভয়ানক তফাৎ! সত্যি ব’ল্চি আমার দেখতে ভারি মজা লাগে!

 আমার পা দেখো আর ওদের পা দেখো—যতোদূর চেয়ে দেখি আমার পায়ের আর অন্ত দেখিনে—এতো বড়ো পা। পদ-মর্য্যাদা এর চেয়ে আর কী আশা করা যেতে পারে! কিন্তু পিঁপ্ড়ে‌রা আপনাদের ক্ষুদে ক্ষুদে প। নিয়েই সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট আছে! দেখে আশ্চর্য্য বোধ হয়! হাজার হোক, পিঁপ্ড়ে‌ কি না!

 ওরা একে ক্ষুদ্র,তাতে আবার আমি বিস্তর উঁচু থেকে দেখি—ওদের সবটা আমার নজরে আসে না্। কিন্তু আমি আমার অতি দীর্ঘ ছ’পায়ের উপরে দাঁড়িয়ে কটাক্ষে দৃকপাত ক’রে আন্দাজে ওদের আগাগোড়াই বুঝে নিয়েচি। কারণ পিঁপ্ড়ে‌ এতো ক্ষুদ্র যে ওদের দেখে ফেল্তে‌ অধিকক্ষণ লাগে না। পিঁপ্ড়ে‌জাতি সম্বন্ধে আমি ডাঁই ভাষায় একটা কেতাব লিখ্বো‌ এবং বক্তৃতাও দেবো।