পাতা:ভগ্নহৃদয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/২২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৬
ভগ্নহৃদয়।

সমীরণ, কুসুমের লঘু পরিমল-ভার বহি
পথশ্রমে শ্রান্ত হোয়ে বিশ্রাম লভিছে রহি রহি,
সেই পরিমল সাথে আমনি সে যাইত মিলায়ে,
ভ্রমি কত বনে বনে, পরিমল রাশি সনে
অতি দূর দিগন্তের হৃদয়েতে যাইত মিশায়ে।
তটিনীর কলস্বর, পল্লবের মরমর,
শত শত বিহগের হৃদয়ের আনন্দ উচ্ছ্বাস,
সমস্ত বনের স্বর মিশে হ’ত একত্তর,
একপ্রাণ হোয়ে তারা পরশিত উন্নত আকাশ,
তখন সে সঙ্গীতের তরঙ্গে করিয়া আরোহন,
মেঘের সোপান দিয়া অতি উচ্চ শূন্যে গিয়া
উষার আরক্ত-ভাল পারিত গো করিতে চুম্বন!
কল্পনা, থাম গো থাম, কোথায়—কোথায় যাও নিয়ে?
ক্ষুদ্র এ পৃথিবী, দেবী, কোন্ খেনে রেখেছি ফেলিয়ে,
মাটীর শৃঙ্খল দিয়ে বাঁধা যে গো রোয়েছে চরণ,
যত উচে আরোহিব, তত হবে দারুণ পতন!
কল্পনার প্রলোভনে নিরাশার বিষ ঢাকা,
শূন্য অন্ধকার মেঘে সন্ধ্যার কিরণ মাখা;
সেই বিষ প্রাণ ভোরে সখিলো করিনু পান,
মন হ’য়ে গেল, সখি, অবসন্ন—ম্রিয়মান।
মুরলা।-কবিগো, ও সব কথা ভেবোনাকো আর, 
শ্রান্ত মাথা রাখ’ এই কোলেতে আমার।
কবি –সখি, আর কত দিন সুখ হীন, শান্তি হীন, 
হাহা কোরে বেড়াইব, নিরাশ্রয় মন লোয়ে!