পাতা:ভগ্নহৃদয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৭১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ষষ্ঠ সর্গ।
৬৫

কপালে মারিছে উঁকি, কপোল পড়িছে ঝুঁকি,
ওই মুখ দেখিবারে কৌতুহলে সমাকুল;
অজস্র গোলাপ রাশি পড়িয়া চরণ তলে
না জানি কি মনেদুখে আকুল শিশির জলে!
তোমার প্রতিমা লোয়ে কল্পনা এমনি করি
খেলাইয়া বেড়াইছে নাহি দিবা বিভাবরী;
কভু বা তারার মাঝে, কভু বা ফুলের পরে,
কভু বা উষার কোলে, কভু সন্ধ্যা-মেঘ স্তরে;
কত ভাবে দেখিতেছে—কত ছবি আঁকিতেছে;
প্রফুল্ল-আনন কভু হরষের হাসিমাখা,
অভিমান-নত আঁখি কভু অশ্রুজলে ঢাকা।
কাছে এস’, কাছে এস', একবার মুখ দেখি,
তোল গো, নলিনী বালা, হাসি ভারে নত আঁখি!
মর্ম্মভেদী আশা এক লুকানো হৃদয় তলে,
ওই হাতে হাত দিয়ে—প্রাণে প্রাণে মিশাইয়ে
বসন্তের বায়ু সেবি, কুসুমের পরিমলে,
নীরব জোছনা রাতে, বিপাশা তটিনী তীরে,
ফুল-পথ মাড়াইয়া দোঁহে বেড়াইব ধীরে;
আকাশে হাসিবে চাঁদ, নয়নে লাগিবে ঘোর,
ঘুমময় জাগরণে করিব রজনী ভোর!
আহা সে কি হয় সুখ! কল্পনায় ভাবি মনে
বিহ্বল আঁখির পাতা মুদে আসে দু-নয়নে!
মুরলা।—(স্বগত) হৃদয় রে— 
এ সংসারে আর কেন রয়েছি আমরা?