পাতা:ভানুসিংহের পত্রাবলী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভানুসিংহের পত্রাবলী
১২৯

খরতর, দলে দলে শৈবাল ভেসে আস্‌চে। পল্লীর আঙিনার কাছ পর্য্যন্ত জল উঠেচে; ঘন বাঁশের ঝাড়; আম কাঠাল তেঁতুল কুল শিমুল নিবিড় হ’য়ে উঠে গ্রামগুলিকে আচ্ছন্ন ক’রে ফেলেচে; মাঝে মাঝে নদীর তীরে তীরে কাঁচা ধানের ক্ষেতে জল উঠেচে, কচি ধানের মাথা জলের উপর জেগে আছে। দুই তটে স্তরে স্তরে সবুজ রঙের ঘনিমা ফুলে ফুলে উঠেচে, তারি মাঝখান দিয়ে বর্ষার খোলা নদীটি তা’র গেরুয়া রঙের ধারা বহন ক’রে ব্যস্ত হ’য়ে চ’লেচে, সমস্তটার উপর বাদল-সায়াহ্নের ছায়া। বৃষ্টি নেমে এলো—দূরে মেঘের ফাঁক দিয়ে সূর্য্যাস্তের একটা ম্লান আভা এই বৃষ্টিধারার আবেগের উপর যেন সান্ত্বনার ক্ষীণ প্রয়াসের মতো এসে প’ড়েচে।

 আমার এই বোট ছাড়া নদীতে আর নৌকা নেই। এই জলস্থল আকাশের ছায়াবিষ্ট নিভৃত শ্যামলতার সঙ্গে মিল ক’রে একটি গান তৈরি ক’র্‌তে ইচ্ছে ক’র্‌চে, কিন্তু হয় তো হ’য়ে উঠ্‌বে না। আমার দুই চক্ষু এখন বাইরের দিকে চেয়ে থাকতে চায়,—খাতার দিকে চোখ রাখ্‌বার এখন সময় নয়। অনেক দিন বোলপুরে শুক্‌নো ডাঙায় কাটিয়ে এসেচি, এখন এই