পাতা:ভানুসিংহের পত্রাবলী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২
ভানুসিংহের পত্রাবলী।

কাজ থেকে নয়, সংসারের নানা জটিল বন্ধন থেকে যথাসম্ভব মুক্ত থাক্‌তে হয়। কাজই হোক্, আর মানুষই হোক্, আমাকে একেবারে চাপা দিলে বা বেঁধে ফেল্লে আমার জীবন ব্যর্থ হ’তে থাকে। আমার মন ওড়্‌বার জন্যে শূন্যকে চায়। তাকে খাঁচায় বাঁধ্‌বার আয়োজন যতবার হ’য়েছে, সেই আয়োজনের শিকল ছিন্ন হ’য়ে প’ড়ে গেচে। হঠাৎ একদিন দেখ্‌তে পাবে আমার কাজকর্ম্মের দাঁড়খানা তা’র শিকল নিয়ে কোথায় প’ড়ে আছে, আর আমি অত্যুচ্চ অবকাশের আগ্‌ডালের উপর অসীম ফাঁকার মধ্যে এক্‌লা ব’সে গান জুড়ে দিয়েচি। তাই ব’ল্‌চি—দরজা-জান্‌লার আড়াল থেকে ঐ নীলে-সবুজে-সোনালিতে মেশানো ফাঁকার একটা অংশ যেম্‌নি দেখ্‌তে পাই, অম্‌নি আমার মন ডেস্কের ধার থেকে ব’লে ওঠে—ঐখানেই তো আমার জায়গা, ঐ ফাঁকাটাকে-যে আমার আনন্দ দিয়ে, গান দিয়ে ভ’রে তুল তে হবে। পুকুর আছে মাটির বাঁধ দিয়ে ঘেরা—সেইখানেই তা’র কাজ, কেউবা স্নান ক’র্‌চে, কেউবা জল তুল্‌চে, কেউবা বাসন মাজ্‌চে। কিন্তু আমি হ’চ্চি মেঘের মতো; আমাকে তো তটের ঘের দিলে চ’ল্‌বে না, আমাকে বাঁধ্‌তে গেলে