পাতা:ভানুসিংহের পত্রাবলী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভানুসিংহের পত্রাবলী
৩১

প্রভাতের কাজকর্ম্মের কলধ্বনি উঠেচে। আমার ঠিক সাম্‌নেই ‘দিনুবাবুর’ ঘরের দোতালায় রাজমিস্ত্রী ও মজুরের দল নানারকম ডাক্‌হাঁক্ এবং ঠুক্‌ঠাক্ লাগিয়ে দিয়েচে। দূরে থেকে ছেলেদের কণ্ঠস্বরও শোনা যাচ্চে, পূবদিকের সদর রাস্তা দিয়ে সার-বাঁধা গোরুর গাড়ি ইঁটের বোঝা নিয়ে আস্‌চে, তা’রই অনিচ্ছুক চাকার আর্ত্তনাদ এবং গাড়োয়ানের তর্জ্জন-ধ্বনির বিরাম নেই, তা’র উপরে ঠিক আমার পিছনের জানালার বাইরে সুধাকান্তর ঘরের চালের উপরে ব’সে একদল চড়ুইপাখী কিচিমিচি ক’রে কী-যে বিষম তর্ক বাধিয়ে দিয়েচে, তার একবর্ণ বোঝ্‌বার জো নেই,—প্রায় ন্যায়শাস্ত্রেরই তর্কের মতো। কিন্তু তবু আজ আলোকে অভিষিক্ত আকাশের এই অন্তরতর স্তব্ধতা কিছুতেই যেন ভাঙ্‌তে পারচে না। গায়ের উপর দিয়ে হাজার হাজার যে-সব ঝরণা ঝ’রে প’ড়্‌চে, তাতে যেমন হিমালয়ের অভ্রভেদী স্তব্ধতাকে বিচলিত করে না, এও ঠিক সেই রকম। একটি তপঃ-প্রদীপ্ত অপরিমেয় মৌনকে বেষ্টন করে এই সমস্ত ছোটো ছোটো শব্দের দল খেলা ক’রে চ’লেচে—তাতে তপস্যার গভীরতা আরো বড়ো হ’য়ে প্রকাশ পাচ্চে, নষ্ট হ’চ্চে না। শরতের