পাতা:ভানুসিংহের পত্রাবলী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভানুসিংহের পত্রাবলী
৪৫

চেয়েচো। যা বলি তা আমার ভালো মনে থাকে না। এণ্ড্‌রুজ্ উপাসনার পরেই আমার কাছে এসে একবার ইংরেজিতে তা’র ভাবখানা শুনে নেন, তাই খানিকটা মনে পড়ে। এবারে ব’লেছিলুম, জগতে একটা খুব বড়ো শক্তি হ’চ্চে প্রাণ, অথচ সেই শক্তি বাইরের দিক থেকে কত ছোটো, কত সুকুমার, একটু আঘাতেই ম্লান হ’য়ে যায়। এমন জিনিষটা প্রতি মুহুর্ত্তে বিপুল জড়-বিশ্বের ভারাকর্ষণের সঙ্গে প্রতি মুহুর্তে লড়াই ক’রে দাঁড়িয়ে আছে, বেড়িয়ে বেড়াচ্চে।

 বালক অভিমন্যু যেমন সপ্তরথীর ব্যূহে ঢুকে লড়াই ক’রেছিলো, আমাদের সুকুমার প্রাণ তেমনি অসংখ্য মৃত্যুর সৈন্যদলের মধ্যে দিয়ে অহর্নিশি লড়াই ক’রে চ’লেচে। বস্তুর দিক থেকে দেখ্‌লে দেখা যায়, এই প্রাণের উপকরণ অতি তুচ্ছ,—খানিকটা জল, খানিকটা কয়লা, খানিকটা ছাই, খানিকটা ঐ রকম সামান্য কিছু, অথচ প্রাণ আপনার ঐ বস্তুর পরিমাণকে বহু পরিমাণে অতিক্রম ক’রে আছে। মৃত-দেহে সজীব-দেহে বস্তুপিণ্ডের পরিমাণের তফাৎ নেই, অথচ উভয়ের মধ্যকার তফাৎ অপরিসীম। শুধু তাই নয়, সজীব বীজের বর্ত্তমান আবরণের মধ্যে মহারণ্য লুকিয়ে আছে।