পাতা:ভারতপথিক রামমোহন রায়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তাঁর বেড়া-ভাঙার বাণী নিয়ে আসেন। মনে করিয়ে দেন যে, আরামের মধ্যে আনন্দ নেই, আনন্দকে মিলবে কেবল সেই অসীমের প্রাঙ্গণে। লোকে বলে এতদিনকার অভ্যাস আর অনুষ্ঠান দিয়ে বেড়া তৈরি করেছি, এখন সে গণ্ডি ভাঙব কী করে? এসেছি আমরা আমাদের গম্যস্থানে, আরামে আছি, আর খুঁজে বেড়াতে চাই না। তারা তাদের মিথ্যাকেই আঁকড়ে ধরে মহাপুরুষের সত্যবাণীকে অস্বীকার করে; তাঁকে গাল দেয়, অপমানও করে। বিজ্ঞানের দিক দিয়েও আমরা দেখি মানুষ আরাম পাবার জন্যে তার বুদ্ধিকে একদা আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধেছে। প্রাচীনকালে লোক বলত যে, আকাশ একটা কঠিন গোলকার্ধ, তাতে নড়চড় নেই, মাথার উপর এই ফার্মামেণ্ট‍্ (firmament) কল্পনা করে নিয়ে এবং জগৎ-সংসারের সমস্ত নিয়ম একেবারে বেঁধে ফেলে মানুষ আরাম পেলে— যেন বিভ্রমের পথে তার ভ্রাম্যমাণ বুদ্ধির একটা স্থিতি হল। আমাদের দেশের জ্ঞানবৃদ্ধেরাও বলেছেন যে, সুমেরুশিখরের এক দিক দিয়ে সূর্য ওঠে এবং আর-এক দিকে নামে; কচ্ছপের খোলসের উপর আর বাসুকির মাথায় পৃথিবী অবস্থিত এই কল্পনা করে ভূমিকম্প ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের তাঁরা একটা ব্যাখ্যা করে নিলেন। এতে করে তাঁদের বুদ্ধি আরাম পেলে। কিন্তু সে বাঁধা নিয়ম টিকল না তো। মানুষই তো শেষকালে বললে পৃথিবীও চলছে। আরামপ্রিয় মানুষ এই সম্ভাবনায় হিংস্র হয়ে উঠল, সন্ধানের দুরূহ পথে পরিশ্রান্ত হবার ভয়ে সে

৪৬