পাতা:ভারতপথিক রামমোহন রায়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বৈজ্ঞানিককে বললে তার কথা প্রত্যাহার করতে। মানুষ কিন্তু অভ্যাসকে মানে নি, যদিও সে বাঁধামতওয়ালাদের কাছে অবমানিত হয়েছে, মার খেয়েছে। প্রাণ দিয়েও মানুষ সত্যকে দেখাবার প্রয়াস করেছে, ভয় পায় নি।

 ধর্মেও দেখি সেইরকম বাঁধা নিয়ম, কত শুচিতা, কত কৃত্রিম গণ্ডি। নিয়ম পালন করে আচার আবৃত্তি আর অভ্যাস রক্ষা করে সে তার চিন্তাকে অবকাশ দিতে চেয়েছে বহুবিধ জটিলতা থেকে। মানুষ বলেছে যে, আদিকাল থেকে ব্রহ্মা যে নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন, তার বাইরে যাবার জো নেই। ফলে নিত্য কৃত্রিমতার দরুন তার মন অসাড় হয়ে যায়, সে তখন নিত্যধর্ম অর্থাৎ সত্যকে মেনে নিতে দ্বিধাবোধ করে। আমাদের দেশে ধর্মের যখন এইরকম নিঃসাড় অবস্থা তখন রামমোহন এসেছিলেন। বাঁধা নিয়মের পথ পরিত্যাগ করে তিনি দুর্গম পথের যাত্রী হয়েছিলেন। এ কথা বলা যাবে না যে, শাস্ত্রজ্ঞ না হয়ে তিনি অন্য পথ বেছে নিয়েছিলেন। আচার আবৃত্তি ও অনুষ্ঠানের মধ্যে মন তাঁর তৃপ্তি মানে নি, অসীমের সন্ধান করতে গিয়ে তিনি উপনিষদের দ্বারে এসে পেঁচেছিলেন। অন্যান্য মহাপুরুষের মতো তিনিও এসেছিলেন সন্ধানের পথে মানুষকে মুক্তি দিতে। তাদের মতোই কত লাঞ্ছনা গঞ্জনা, কত অবমাননা তাঁকে সইতে হয়েছে, কিন্তু বিপদ কোনোদিন কে সত্যপথ থেকে বিচলিত করতে পারে নি।

 অতি বড়ো শোক ও বেদনার মধ্যে পিতামহীর মৃত্যুর

৪৭