পাতা:ভারতপথিক রামমোহন রায়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 কিন্তু মানুষের উৎসব তার প্রাণসম্পদের চেয়ে বেশি কিছু নিয়ে। যা সে সহজে পেয়েছে তাতে সে অন্য জীবজন্তুর সঙ্গে সমান, যা সে সাধনা করে পেয়েছে তাতেই সে মানুষ। সে আপনার ঐশ্বর্য আপনি যখন সৃষ্টি করে তখনি সে আপনাকে সত্য করে পায়। তখনি সে বলে, ‘আমি পেয়েছি।’ তার আনন্দ সৃষ্টির আনন্দ।

 যা-খুশি তাই বানিয়ে তোলা মাত্রকেই সৃষ্টি বলে না। কোনো বিশ্বসত্যকে লাভ করার যোগে প্রকাশ ও প্রকাশ করার যোগে লাভ করাকেই বলে সৃষ্টি। সুতরাং সে কারো একলার নয়। পশুপক্ষীর যে উৎসবের কথা পূর্বে বলেছি সে তাদের একলার, মানুষের উৎসব সকলকে নিয়ে। লক্ষপতি তার ব্যবসায়ে মস্ত লাভ করতে পারে, তা নিয়ে সে ঘটা করে ভোজ দিতেও পারে, কিন্তু সেইখানেই সেটা ফুরালো— মানুষের উৎসবলোকে সে স্থান পেল না। সে আপন লাভকে অতি সতর্কতা ও কৃপণতার সঙ্গে লোহার সিন্দুকের মধ্যে বন্দী করে রাখে, তার পরে একদিন সে অতি কঠিন পাহারার ভিতর থেকেও শূন্যে অন্তর্ধান করে। সে নিজে সৃষ্টি নয় বলেই উৎসব সৃষ্টি করতে পারে না। সৃষ্টি মানে উৎসৃষ্টি, যা সকল ব্যয়কে অতিক্রম করে দানরূপে থেকে যায়।

 চিরকালের ঐশ্বর্য যখন তার কাছে প্রকাশ পায় তখন মানুষ বড়ো করে বলতে চায় ‘আমি পেয়েছি’। এ কথা সে বলতে চায় সকল দেশকে, সকল কালকে, কেননা পাওয়া তার

৫০