পাতা:ভারতপথিক রামমোহন রায়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ব’লেই গণ্য করে, যুদ্ধে প্রতিকূল পক্ষ বিনষ্ট হলে তাতে তারা ঈশ্বরের পক্ষপাত কল্পনা ক’রে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ঈশ্বরের নামে যে য়ুরোপে হিংস্রতা বহু শতাব্দী ধরে প্রশ্রয় পেয়েছে শুধু তাই নয়, যখন তারা যিশুর বাণীর প্রতিধ্বনি ক’রে স্বর্গরাজ্যস্থাপনের কথা বলে তখন সেইসঙ্গেই নিজেদের রাজার জন্যে দেশের জন্যে ঈশ্বরের কৃপায় সকলপ্রকার উপায়ে মর্তরাজ্যবিস্তারের আকাঙ্ক্ষাকেই জয়ী করতে চেষ্টা করে। এমন-কি, যুদ্ধবিগ্রহের সময় তাদের ধর্মযাজকেরা যত বিদ্বেষের উত্তেজনার অনুমোদন করেছে, এমন সৈনিকেরাও নয়।

 এর কারণ, বাইবেলে যে অংশে ঈশ্বর রাগদ্বেষচালিত দলপতিরূপে কল্পিত ও বর্ণিত, সেই অংশই তাদের নিজের স্বাভাবিক প্রবৃত্তির সহায় হয়ে তাদের অহমিকা ও পরজাতিবিদ্বেষকে বল দিয়েছে। কিন্তু তৎসত্ত্বেও খৃস্টের বাণী-যে কাজ করছে না তা হতেই পারে না। তার কাজ গূঢ় গভীর। বস্তুত আমাদের স্বাভাবিক অহংকার দেবতাকে ক্ষুদ্র ক’রে আমাদের শুভবুদ্ধিকে খণ্ডিত করে বলেই পরম সত্যের অদ্বৈতরূপ উপলব্ধির জন্যে আমাদের আত্মার এত গভীর প্রয়োজন।

 বুদ্ধদেব জাতিবর্ণ ও শাস্ত্রের সমস্ত ভাগবিভাগ অতিক্রম করে বিশ্বমৈত্রী প্রচার করেছিলেন। এই বিশ্বমৈত্রী যে মুক্তি বহন করে সে হচ্ছে অনৈক্যবোধ থেকে মুক্তি। রিপুমাত্রই মানুষের সঙ্গে মানুষের ভেদ ঘটায়, কেননা ভেদ আমাদের অহং-এর মধ্যে, এবং আমাদের রিপুগুলি এই অহং-এরই

৫৭