পাতা:ভারতপথিক রামমোহন রায়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বন্ধুগণ, জয়ার ক্লান্তিতে আজ আমি অভিভূত। একান্ত ইচ্ছাসত্ত্বেও এই স্মরণ-উৎসবে সম্পুর্ণভাবে যোগ দিতে পারি নি, সেজন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি।

 আজ আমাদের উপাসনার একটি বিশেষ দিন। উপাসনার বিশেষ বিশেষ উপলক্ষ আমাদের কাছে সময়-সময় উপস্থিত হয়। প্রকৃতির মধ্যেও দেখি, ঋতু-ঋতুতে নূতন নূতন উৎসব। প্রত্যেক ঋতু তার নিজের অর্ঘ্য নিবেদন বহন করে আনে। শরৎ যখন তার শিশিরধৌত নির্মল সৌন্দর্যের প্রাচুর্য নিয়ে দেখা দেয়, তখন সে আমাদের আত্মাকে আহ্বান করে, তখন আমাদের একটি বিশেষ বন্দনার দিন উপস্থিত হয়। প্রকৃতির সৌন্দর্যের মধ্যে আমরা শুনতে পাই বহুবিচিত্রকে নিয়ে একটি অখণ্ড সুষমার বাণী। জলে স্থলে আকাশে রূপসম্মিলনের মধ্যে সেই অপরূপ একের সংগীত কেবল আমাদের আত্মার কাছেই পৌঁছায়— সে এমন একটি লিপি যার ঠিকানা একমাত্র এইখানেই।

 সৌন্দর্য অনির্বচনীয়। তাকে আমরা কোনোরকম ব্যাখ্যার দ্বারা বোঝাতে পারি না। আমাদের অন্তরতম উপলব্ধির দ্বারা তাকে আমরা শুধু স্বীকার করতে পারি। সংসারের সমস্ত-কিছু প্রয়োজনকে অতিক্রম করে এই সৌন্দর্য বিরাজমান। সৃষ্টি- রক্ষা বা পালনের কোনো তাগিদ দিয়ে তার হিসাব পাওয়া যায় না। সকল প্রয়োজনের অতীত যে ঐশ্বর্য, বিশ্বজগতে আনন্দরূপের আবির্ভাবকে সে প্রকাশ করে। তাই সংসারযাত্রার প্রতিদিনের সমস্ত অব্যবহিত দাবি চুকিয়ে দিয়েও যে অসীম উদ্বৃত্ত সৌন্দর্য দেখা দেয় তার মধ্যেই আমাদের আত্মা বিশ্বের নিত্যোৎসবের মূল সুরটিকে উপলব্ধি করতে পারে।

৬৩