পাতা:ভারতপথিক রামমোহন রায়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

থাকে ততদিন সে আপন মর্মগত জাগ্রৎশক্তিতে নিজেকে নিজে নিরন্তর সংশোধন করে জয়ী করে চলতে পারে। বস্তুত প্রাণের প্রক্রিয়াই তাই। সে তো নিত্যসংগ্রাম। আমরা চলি, সে তো প্রতি পদক্ষেপেই মাটির অবিশ্রাম আকর্ষণের সঙ্গে বিরোধ। জড়তার ব্যূহ চারি দিকেই, দেহের প্রত্যেক যন্ত্রই তার সঙ্গে লড়াইয়ে প্রবৃত্ত। হৃদযন্ত্র চলছে, দিনে রাত্রে, নিদ্রায় জাগরণে; জড় রাজ্যের প্রকাণ্ড নিষ্ক্রিয়তা সেই চলার বিরুদ্ধ, মুহূর্তে মুহূর্তেই সে ক্লান্তির বাঁধ বাঁধতে চায়, যতক্ষণ জোর থাকে হৃদযন্ত্র মুহূর্তে মুহূর্তেই সেই বাধাকে অপসারণ করে চলে। বাতাস আমাদের চারি দিকে আপন নিয়মে প্রবাহিত, তাকে প্রাণের ব্যবস্থাবিভাগ আপন নিয়মের পথে প্রতিক্ষণেই বলপূর্বক চালনা করে। রোগের কারণ ও বীজ অন্তরে বাহিরে সর্বত্রই, দেহের আরোগ্যসেনানী তাকে সর্বদাই আক্রমণ করছে— এর আর অবসান নেই। জড়ধর্মের সঙ্গে জীবধর্মের, রোগশক্তির সঙ্গে আরোগ্যশক্তির নিরবচ্ছিন্ন যুদ্ধক্রিয়াকেই বলে প্রাণক্রিয়া। সেই সচেষ্ট শক্তি যদি ক্লান্ত হয়, এই প্রবল বিরোধে যদি শৈথিল্য ঘটে, দেহব্যবস্থায় চলার চেয়ে না-চলার প্রভাব যদি বেড়ে ওঠে, তবেই বিকৃতি ও মলিনতায় দেহ কেবলই অশুচি হতে থাকে, তখন মৃত্যুই করুণারূপে অবতীর্ণ হয়ে এই শ্রান্তসংগ্রাম পরাভবকে জীবজগৎ থেকে অপসারিত করে দেয়।

 সমাজদেহও সজীব দেহ। জড়ত্বের মধ্যেই তার সমস্ত

৬৯