পাতা:ভারতবর্ষে.djvu/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



সিংহলে বৌদ্ধধর্ম্ম।
২১

ভাবে রহিল। তাহার সুবক্র সুন্দর ওষ্ঠে ও তাহার দীর্ঘায়ত সুন্দর নেত্রে, রহস্যময় মধুর প্রশান্ত হাস্য বিরাজমান। ... ... ... নিস্তব্ধতা আরও যেন গুরুভার হইয়া উঠিল; কিয়ৎকাল পরেই সহসা তুরী ভেরীর গভীর নিনাদে সেই নিস্তব্ধতা ভঙ্গ হইল। কিন্তু জনতার মধ্য হইতে কোন শব্দ নাই। পবিত্র দীপাবলীর নিম্নে, পুষ্পরাশির পশ্চাতে, পুরোহিতেরা গম্ভীর ভাবে দণ্ডায়মান।

 মন্দিরের বিজন অন্তরতম প্রদেশে, পুরোহিতদিগের পশ্চাতে পবিত্র স্থানে, যোগাসনে উপবিষ্ট একটি বৃহৎ স্ফটিকমূর্ত্তি স্থাপিত—তাহার অবয়ব-রেখাসকল অস্পষ্ট। মূর্ত্তিটি এরূপ স্বচ্ছ যে, উহাকে উপছায়া বলিয়া মনে হয়—মনে হয় যেন জড়ভাব হইতে মুক্ত কোন অশরীরী আত্মা। যে মহাপুরুষ কঠোর সমাধিবলে আপন রক্তমাংসের বন্ধন, কামনার বন্ধন সকল ছিন্ন করিয়াছিলেন, ইহা তাঁহারই উপযুক্ত মূর্ত্তি বটে। এই মূর্ত্তি জনসাধারণকে শাসন করিতেছে, অথচ কোলাহলময় মনুষ্যের জনতা হইতে দূরে অবস্থিত—এবং ইহার স্বচ্ছ ওষ্ঠাধরে যে অনন্ত মধুর হাস্য বিরাজমান তাহাতে মনে হয়, যাহার এই মূর্ত্তি তিনি চিরকালের মত শান্তি-ধামে প্রবেশ করিয়াছেন।

 যতই আমি এই দেশ ও দেশের লোকদিগকে দেখিতেছি ততই যেন আমি এই ধর্ম্ম ও ধর্ম্মনীতি বুঝিতে পারিতেছি। আজ যাহা আমাদের যুরোপীয় পণ্ডিতেরা বলিতেছেন, ত্রয়োবিংশতি শতাব্দী হইতে বৌদ্ধমুনিরা তাহাই শিক্ষা দিয়া আসিতেছেন। তাঁহারা বলেন, কিছুই নাই—সকলই হইতেছে। এই জগৎ ক্ষণস্থায়ী আবির্ভাবের প্রবাহমাত্র—পরিবর্ত্তন ব্যতীত ইহাতে আর কিছুই স্থায়ী নহে। পৃথিবী, আকাশ, অষ্টাদশ নরক, দানবগণ ও তাহাদের নিবাসভূমি নিকৃষ্ট লোক-সকল, সকলই নদীর জলের ন্যায়