পাতা:ভারতবর্ষে.djvu/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
ভারতবর্ষে।

তাহার আর পুনর্জন্ম নাই।’ ‘যাহারা জ্ঞান-যোগে মুক্ত হইয়াছে, প্রশান্ত তাহাদের বাক্য, প্রশান্ত তাহদের কার্য্য। তাহারা পরজন্মের জন্য আকাঙ্ক্ষা করে না। জীবনের আকর্ষণ তিরোহিত হওয়ায় এবং অন্য কোন কামনা মনে উদিত না হওয়ায়, জ্ঞানীরা তৈলবিরহিত দীপের ন্যায় নির্ব্বাণ প্রাপ্ত হন।’ ইহাই বৌদ্ধদিগের চরম সুখের অবস্থা। শাক্যমুনি তাঁহার পূর্ব্ববর্ত্তী ব্রাহ্মণ আচার্য্যদিগের ন্যায়, জগৎকে তলাইয়া দেখিবার চেষ্টা করিয়াছেন—যতই তলাইয়া দেখেন হাতে কিছুই ঠেকে না—হস্ত হইতে যেন সব সরিয়া যায়, গলিয়া যায়; অবশেষে তাঁহার দৃঢ়মুষ্টিতে কতকটা শূন্য সাপটিয়া ধরিলেন। চারিদিকেই মায়া বিভ্রম বিভাসিত—চারিদিকেই ঘটনা সকলের চঞ্চল আবর্ত্ত—কিছুই স্থায়ী নহে। প্রকৃতি আপন উদ্দেশ্য সিদ্ধ করিবার জন্য অজ্ঞান মনুষ্যকে প্রবঞ্চনা করিতেছে—কিন্তু জ্ঞানী তাহাতে ভুলেন না। তিনি নির্ব্বাণশান্তির আশ্রয় লইবার জন্য এই ক্ষণস্থায়ী বিষয়-বিভ্রম হইতে দূরে পলায়ন করেন। তাঁহার অন্তরে তিনি এক মহাশূন্য স্থাপন করিয়াছেন—কিছুতেই তাঁহাকে আর বিচলিত করিতে পারে না। তাঁহার ওষ্ঠাধরে যদি কখন চাঞ্চল্যের রেখা দেখা যায়, সে কেবল বিশ্বজনীন ঔদার্য্য ও মানব-দুঃখের জন্য অনুকম্পা-জনিত মধুর প্রশান্ত হাস্যের ঈষৎ বিস্ফুরণ মাত্র।”