পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
অত্যুক্তি।
১০৭

হয়। যে প্রসঙ্গে আমাদের কথা আপনি বাড়িয়া চলে, সে প্রসঙ্গে ইংরেজ চুপ—যে প্রসঙ্গে ইংরেজ অত্যন্ত বেশি বকিয়া থাকে, সে প্রসঙ্গে আমাদের মুখে কথা বাহির হয় না। আমরা মনে করি—ইংরেজ বড় বাড়াবাড়ি করে, ইংরেজ মনে করে—প্রাচ্যলোকের পরিমাণবোধ নাই।

 আমাদের দেশে গৃহস্থ অতিথিকে সম্বোধন করিয়া বলে—“সমস্ত আপনারি—আপনারি ঘর, আপনারি বাড়ী।” ইহা অত্যুক্তি। ইংরেজ তাহার নিজের রান্নাঘরে প্রবেশ করিতে হইলে রাঁধুনিকে জিজ্ঞাসা করে—“ঘরে ঢুকিতে পারি কি?” এ একরকমের অত্যুক্তি।

 স্ত্রী মুনের বাটি সরাইয়া দিলে ইংরেজ স্বামী বলে—“আমার ধন্যবাদ জানিবে!” ইহা অত্যুক্তি। নিমন্ত্রণকারীর ঘরে চর্ব্ব্যচোষ্য খাইয়া এবং বঁধিয়া এদেশীয় নিমন্ত্রিত বলে—“বড় পরিতোষ লাভ করিলাম"—অর্থাৎ আমার পরিতোষেই তোমার পারিতোষিক। নিমন্ত্রণকারী বলে—“আমি কৃতার্থ হইলাম” —ইহাকে অত্যুক্তি বলিতে পার।

 আমাদের দেশে স্ত্রী স্বামীকে পত্রে “শ্রীচরণেষু” পাঠ লিখিয়া থাকে, ইংরেজের কাছে ইহা অত্যুক্তি। ইংরেজ যাহাকে-তাহাকে পত্রে প্রিয়সম্বোধন করে—অভ্যস্ত না হইয়া গেলে ইহা আমাদের কাছে অত্যুক্তি বলিয়া ঠেকিত।

 নিশ্চয়ই আরো এমন সহস্র দৃষ্টান্ত আছে। কিন্তু এগুলি বাঁধা অত্যুক্তি—ইহারা পৈতৃক। দৈনিক ব্যবহারে আমরা নব নব অত্যুক্তি রচনা করিয়া থাকি—ইহাই প্রাচ্যজাতির প্রতি ভর্ৎসনার কারণ।

 তালি একহাতে বাজে না। তেমনি কথা দুজনে মিলিয়া হয়—শ্রোতা ও বক্তা যেখানে পরস্পরের ভাষা বোঝে, সেখানে অত্যুক্তি উভয়ের যোগে আপনি সংশোধিত হইয়া আসে। সাহেব যখন চিঠির শেষে আমাকে লেখেন Yours truly—সত্যই তোমারি, তখন তাঁহার এই অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তার সত্যপাঠটুকুকে তর্জ্জমা করিয়া