পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১১৪
ভারতবর্ষ।

ঘোড়া, ক’জন লোক আনিতে হইবে, শুনিতেছি তাহার অনুশাসন জারি হইয়াছে। সেই সকল রাজাদেরই হাতিঘোড়া-লোকলস্করে যথাসম্ভব অল্প খরচে চতুর সম্রাট্‌প্রতিনিধি যথাসম্ভব বৃহৎব্যাপার ফাঁদিয়া তুলিবেন। ইহাতে চাতুর্য্য ও প্রতাপের পরিচয় পাওয়া যায়, কিন্তু বদান্যতা ও ঔদার্য্য—প্রাচ্য সম্প্রদায়ের মতে যাহা রাজকীয় উৎসবের প্রাণ বলিলেই হয় তাহা ইহার মধ্যে থাকে না। একচক্ষু টাকার থলিটির দিকে এবং অন্য চক্ষু সাবেক বাদ্‌শাহের অনুকরণকার্য্যে নিযুক্ত রাখিয়া এ সকল কাজ চলে না। এ সব কাজ যে স্বভাবত পারে, সে-ই পারে এবং তাহাকেই শোভা পায়।

 ইতিমধ্যে আমাদের দেশের একটি ক্ষুদ্ররাজা সম্রাটের অভিষেক উপলক্ষে তাঁহার প্রজাদিগকে বহুসহস্র টাকা খাজনা মাপ দিয়াছেন। আমাদের মনে হইল, ভারতবর্ষে রাজকীয় উৎসব কি ভাবে চালাইতে হয়, ভারতবর্ষীয় এই রাজাটি তাহা ইংরেজ কর্তৃপক্ষদিগকে শিক্ষা দিলেন। কিন্তু যাহার নকল করে, তাহারা আসল শিক্ষাটুকু গ্রহণ করে না, তাহারা বাহ্য আড়ম্বরটাকেই ধরিতে পারে। তপ্তবালুকা সূর্য্যের মত তাপ দেয়, কিন্তু আলোক দেয় না। সেইজন্য তপ্তবালুকার তাপকে আমাদের দেশে অসহ্য আতিশয্যের উদাহরণ বলিয়া উল্লেখ করে। আগামী দিল্লিদরবারও সেইরূপ প্রতাপ বিকিরণ করিবে, কিন্তু আশা ও আনন্দ দিবে না। শুদ্ধমাত্র দম্ভ-প্রকাশ সম্রাট্‌কেও শোভা পায় না—ঔদার্যের দ্বারা—দয়াদাক্ষিণ্যের দ্বারা দুঃসহ দম্ভকে আচ্ছন্ন করিয়া রাখাই যথার্থ রাজোচিত। আগামী দরবারে ভারতবর্ষ তাহার সমস্ত রাজরাজন্য লইয়া বর্ত্তমান বাদশাহের নায়েবের কাছে নতিস্বীকার করিতে যাইবে, কিন্তু বাদশাহ তাহাকে কি সম্মান, কি সম্পদ্‌, কোন্‌ অধিকার দান করিবেন? কিছুই নহে। ইহাতে যে কেবল ভারতবর্ষের অবনতিস্বীকার তাহা নহে, এইরূপ শূন্যগর্ভ আকস্মিক