পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১১৮
ভারতবর্ষ।

সম্পূর্ণ নির্দ্দিষ্ট করিয়া তাহার তালিকা দিয়া অন্ধকূপের আয়তন একেবারে ফুট-হিসাবে গণনা করিয়া দিয়াছেন। যেন সত্যের মধ্যে কোথাও কোন ছিদ্র নাই। ওদিকে যে গণিত শাস্ত্র তাঁহার প্রতিবাদী হইয়া বসিয়া আছে, সেটা খেয়াল করেন নাই। হল্‌ওয়েলের মিথ্যা যে কত স্থানে কতরূপে ধরা পড়িয়াছে, তাহা শ্রীযুক্ত অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় মহাশয়ের সিয়াজদ্দৌল্লা গ্রন্থে ভালরূপেই আলোচিত হইয়াছে। আমাদের উপদেষ্টা কার্জ্জন সাহেবের নিকট স্পর্ধা পাইয়া হল্‌ওয়েলের সেই অত্যুক্তি রাজপথের মাঝখানে মাটি ফুড়িরা স্বর্গের দিকে পাষাণঅঙ্গুষ্ঠ উত্থাপিত করিয়াছে।

 প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সাহিত্য হইতে দুই বিভিন্ন শ্রেণীর অত্যুক্তির উদাহরণ দেওয়া যাইতে পারে। প্রাচ্য অত্যুক্তির উদাহরণ আরব্য উপন্যাস এবং পাশ্চাত্য অত্যুক্তির উদাহরণ রাডিয়ার্ড কিপ্লিংয়ের “কিম্‌” এবং তাঁহার ভারতবর্ষীয় চিত্রাবলী। আরব্য উপন্যাসেও ভারতবর্ষের কথা, চীনদেশের কথা আছে, কিন্তু সকলেই জানে তাহা গল্পমাত্র—তাহার মধ্য হইতে কাল্পনিক সত্য ছাড়া আর কোন সত্য কেহ প্রত্যাশাই করিতে পারে না, তাহা এতই সুস্পষ্ট। কিন্তু কিপ্লিং তাঁহার কল্পনাকে আচ্ছন্ন রাখিয়া এমনি একটি সত্যের আড়ম্বর করিয়াছেন যে, যেমন হলপ্‌-পড়া সাক্ষীর কাছ হইতে লোকে প্রকৃত বৃত্তান্ত প্রত্যাশা করে, তেমনি কিপ্লিঙের গল্প হইতে ব্রিটিশপাঠক ভারতবর্ষের প্রকৃত বৃত্তান্ত প্রত্যাশা না করিয়া থাকিতে পারে না।

 ব্রিটিশ পাঠককে এমনি ছল করিয়া ভুলাইতে হয়। কারণ ব্রিটিশ পাঠক বাস্তবের প্রিয়। শিক্ষালাভ করিবার বেলাও তাহার বাস্তব চাই। খেলেনাকেও বাস্তব করিয়া তুলিতে না পারিলে তাহার খেলার সুখ হয় না। আমরা দেখিয়াছি, ব্রিটিশ ভোজে খরগোষ রাঁধিয়া জন্তুটাকে যথাসম্ভব অবিকল রাখিয়াছে। সেটা যে সুখাদ্য ইহাই