পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ধম্মপদং
১৩৯

 অন্য সম্প্রদায় বলেন, জগৎসংসার ভগবানের লীলা। এই লীলার মূলে তাঁহার প্রেম, তাঁহার আনন্দ, অনুভব করিতে পারিলেই আমাদের সার্থকতা।

 এই সার্থকতার উপায়ও পূর্বোক্ত দুই সম্প্রদায়ের উপায় হইতে বস্তুত ভিন্ন নহে। নিজের বাসনাকে খর্ব করিতে না পারিলে ভগবানের ইচ্ছাকে অনুভব করিতে পারা যায় না। ভগবানের ইচ্ছার মধ্যে নিজের ইচ্ছাকে মুক্তিদানই মুক্তি। সেই মুক্তির প্রতি লক্ষ করিয়াই কর্মের শুভাশুভ স্থির করিতে হইবে।

 যাঁহার অদ্বৈতানন্দকে লক্ষ্য করিয়াছেন তাঁহারাও বাসনামোহকে ছেদন করিতে উদ্যত, যাঁহারা কর্মের অনন্ত শৃঙ্খল হইতে মুক্তিপ্রার্থী তাঁহারাও বাসনাকে উৎপাটিত করিতে চান, ভগবানের প্রেমে যাঁহারা নিজেকে সম্মিলিত করাই শ্রেয় জ্ঞান করেন তাঁহারাও বিষয়বাসনাকে তুচ্ছ করিবার কথা বলিয়াছেন।

 যদি এই-সকল ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের উপদেশগুলি কেবল আমাদের জ্ঞানের বিষয় হইত তাহা হইলে আমাদের পরস্পরের মধ্যে পার্থক্যের সীমা থাকিত না। কিন্তু এই ভিন্ন সম্প্রদায়গণ তাঁহাদের ভিন্ন ভিন্ন তত্ত্বকে কাজে লাগাইবার চেষ্টা করিয়াছেন। সে তত্ত্ব যতই সূক্ষ্ম বা যতই স্থূল হউক, সে তত্ত্বকে কাজের মধ্যে অনুসরণ করিতে হইলে যতদূর পর্যন্তই যাওয়া যাক, আমাদের গুরুগণ নির্ভীকচিত্তে সমস্ত স্বীকার করিয়া সেই তত্ত্বকে কর্মের দ্বারা সফল করিতে চেষ্টা করিয়াছেন। ভারতবর্ষ কোনো বড়ো কথাকে অসাধ্য বা সংসারযাত্রার সহিত অসংগত-বোধে কোনোদিন ভীরুতাবশত কথার কথা করিয়া রাখে নাই। এজন্য এক সময়ে যে ভারতবর্ষ মাংসাশী ছিল সেই ভারতবর্ষ আজ প্রায় সর্বত্রই নিরামিষাশী হইয়া উঠিয়াছে। জগতে এরূপ দৃষ্টান্ত অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। যে য়ুরোপ জাতিগত সমুদয় পরিবর্তনের মূলে সুবিধাকেই লক্ষ্য করেন,