পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪২
ভারতবর্ষ

বর্ষ বলে– তোমরা যাহাকে প্রাপ্তি বল তাহাতে আনন্দ নাই বটে; কারণ সে প্রাপ্তির মধ্যে আমাদের সন্ধানের শেষ নাই, সে প্রাপ্তি আমাদিগকে অন্য প্রাপ্তির দিকে টানিয়া লইয়া যায়। প্রত্যেক প্রাপ্তিকেই পরিণাম বলিয়া ভ্রম করি এবং তাহার পরে দেখিতে পাই, তাহা পরিণাম নহে। যে প্রাপ্তিতে আমাদের শান্তি, আমাদের সন্ধানের শেষ, এই ভ্রমে তাহা হইতে আমাদিগকে ভ্রষ্ট করে, আমাদিগকে কোনোমতেই মুক্তি দেয় না। যে বাসনা সেই মুক্তির বিরোধী সেই বাসনাকে আমরা হীনবল করিয়া দিব। আমরা কর্মকে জয়ী করিব না, কর্ম্মের উপরে জয়ী হইব।

 আমাদের গৃহধর্ম, আমাদের সন্ন্যাসধর্ম, আমাদের আহারবিহারের সমস্ত নিয়মসংযম, আমাদের বৈরাগী ভিক্ষুকের গান হইতে তত্ত্বজ্ঞানীদের শাস্ত্রব্যাখ্যা পর্যন্ত, সর্বত্রই এই ভাবের আধিপত্য। চাষা হইতে পণ্ডিত পর্যন্ত সকলেই বলিতেছে, ‘আমরা দুর্লভ মানবজন্ম লাভ করিয়াছি বুদ্ধিপূর্বক মুক্তির পথ গ্রহণ করিবার জন্য, সংসারের অন্তহীন আবর্তের আকর্ষণ হইতে বহির্গত হইয়া পড়িবার জন্য।’

 সংস্কৃত ভাষায় ‘ভব’ শব্দের ধাতুগত অর্থ ‘হওয়া’। ভবের বন্ধন অর্থাৎ হওয়ার বন্ধন কাটিতে চাই। য়ুরোপ খুব করিয়া হইতে চায়– আমরা একেবারেই না-হইতে চাই।

 এমনতরো ভয়ংকর স্বাধীনতার চেষ্টা ভালো কি মন্দ, তাহার মীমাংসা করা বড়ো কঠিন! এরূপ অনাসক্তি যাহাদের স্বভাবসিদ্ধ আসক্ত লোকের সংঘাতে তাহাদের বিপদ ঘটিতে পারে, এমন-কি, তাহাদের মারা যাইবার কথা। অপর পক্ষে বলিবার কথা এই যে, মরা-বাঁচাই সার্থকতার চরম পরীক্ষা নয়। ফ্রান্স তাহার ভীষণ রাষ্ট্রবিপ্লবে স্বাধীনতার বিশেষ একটি আদর্শকে জয়ী করিবার চেষ্টা করিয়াছিল, সেই চেষ্টায় প্রায় তাহার আত্মহত্যার জো হইয়াছিল–যদিই সে মরিত, তবু