পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ভারতবর্ষের ইতিহাস।
২৩

যেখানে ঠেলাঠেলি করিতেছে, সেখানে বলের সামঞ্জস্য হইতে পারে না—সেখানে কালক্রমে জনসংখ্য যোগ্যতার অপেক্ষা বড় হইয় উঠে, উদ্যম গুণের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতা লাভ করে এবং বণিকের ধনসংহতি গৃহস্থের ধনভাণ্ডারগুলিকে অভিভূত করিয়া ফেলে—এইরূপে সমাজের সামঞ্জস্য নষ্ট হইয়া যায় এবং এই সকল বিসদৃশ বিরোধী অঙ্গ গুলিকে কোনমতে জোড়াতাড়া দিয়া রাখিবার জন্য গবর্মেণ্ট্‌ কেবলই আইনের পর আইন স্থষ্টি করিতে থাকে। ইহা অবশ্যম্ভাবী। কারণ বিরোধ যাহার বীজ, বিরোধই তাহার শস্য; মাঝখানে যে পরিপুষ্ট পল্লবিত ব্যাপারটিকে দেখিতে পাওয়া যায়, তাহা এই বিরোধশস্যেরই প্রাণবান্‌ বলবান্‌ বৃক্ষ।

 ভারতবর্ষ বিসদৃশকেও সম্বন্ধবন্ধনে বাঁধিবার চেষ্টা করিয়াছে। যেখানে যথার্থ পার্থক্য আছে, সেখানে সেই পার্থক্যকে যথাযোগ্য স্থানে বিন্যস্ত করিয়া—সংযত করিয়া তবে তাহাকে ঐক্যদান করা সম্ভর। সকলেই এক হইল বলিয়া আইন করিলেই এক হয় না। যাহার এক হইবার নহে, তাহারের মধ্যে সম্বন্ধস্থাপনের উপায় তাহাদিগকে পৃথক্‌ অধিকারের মধ্যে বিভক্ত করিয়া দেওয়া। পৃথককে বলপূর্ববক এক করিলে তাহারা একদিন বলপূর্ব্বক বিছিন্ন হইয়া যায়, সেই বিচ্ছেদের সময় প্রলয় ঘটে। ভারতবর্ষ মিলনসাধনের এই রহস্ত জানিত। ফরাসীবিদ্রোহ গায়ের জোরে মানবের সমস্ত পার্থক্য রক্ত দিয়া মুছিয়া ফেলিবে, এমন স্পর্দ্ধা করিয়াছিল—কিন্তু ফল উলটা হইয়াছে—যুরোপে রাজশক্তি-প্রজাশক্তি, ধনশক্তি জনশক্তি, ক্রমেই অত্যন্ত বিরূদ্ধ হইয়া উঠিতেছে। ভারতবর্ষের লক্ষ্য ছিল সকলকে ঐক্যসুত্রে আবদ্ধ করা, কিন্তু তাহার উপায় ছিল স্বতন্ত্র। ভারতবর্ষ সমাজের সমস্ত প্রতিযোগী বিরোধী শক্তিকে সীমাবদ্ধ ও বিভক্ত করিয়া সমাজকলেবরকে এক এবং বিচিত্রকর্ম্মের উপযোগী করিয়াছিল—নিজ নিজ অধিকারকে