পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ভারতবর্ষের ইতিহাস
২৯

তোমাদেরর কিছুই নাই এবং যাহা লইতেছ, তাহার প্রতিদান দেওয়া তোমাদের সাধ্যের অতীত।” প্রত্যহ এই অবমাননার বিষ আমাদের মজ্জার মধ্যে প্রবেশ করে, ইহাতে পক্ষাঘাত আনিয়া আমাদিগকে নিরুদ্যম করিয়া দেয়। শিশুকাল হইতেই নিজের নিজত্ব উপলব্ধি করিবার কোন অবকাশ—কোন সুযোগ পাই নাই, পরভাষার বানান-বাক্য-ব্যাকরণ ও মতামতের দ্বারা উদ্‌ভ্রান্ত-অভিভূত হইয়া আছি—নিজের কোন শ্রেষ্ঠতার প্রমাণ দিতে না পারিয়া মাথা হেঁট করিয়া থাকিতে হয়। ইংরেজের নিজের ছেলেদের শিক্ষাপ্রণালী এরূপ নহে— অক্সফোর্ড-কেম্ব্রিজে তাঁহাদের ছেলে কেবল যে গিলিয়া থাকে, তাহা নহে, তাহারা আলোক, আলোচনা ও খেলা হইতে বঞ্চিত হয় না। অধ্যাপকদের সঙ্গে তাহাদের সুদূর কলের সম্বন্ধ নহে। একে ত তাহাদের চতুর্দ্দিকবর্ত্তী স্বদেশী সমাজ স্বদেশী শিক্ষাকে সম্পূর্ণরূপে আপন করিয়া লইবার জন্য শিশুকাল হইতে সর্ব্বতোভাবে আনুকূল্য করিয়া থাকে, তাহার পরে শিক্ষাপ্রণালী ও অধ্যাপকগণও অনুকূল। আমাদের আদ্যোপান্ত সমস্তই প্রতিকূল—যাহা শিখি, তাহা প্রতিকূল, যে উপায়ে শিখি, তাহা প্রতিকুল, যে শেখায়, সে-ও প্রতিকূল। ইহা সত্ত্বেও যদি আমরা কিছু লাভ করিয়া থাকি, যদি এ শিক্ষা আমরা কোন কাজে খাটাইতে পারি, তাহা আমাদের গুণ।

 অবশ্য এই বিদেশী শিক্ষাধিক্কারের হাত হইতে স্বজাতিকে মুক্তি দিতে হইলে শিক্ষার ভার আমাদের নিজের হাতে লইতে হইবে এবং যাহাতে শিশুকাল হইতে ছেলেরা স্বদেশীয় ভাবে, স্বদেশীয় প্রণালীতে, স্বদেশের সহিত হৃদয়মনের যোগরক্ষা করিয়া, স্বদেশের বায়ু ও আলোক প্রবেশের দ্বার উন্মুক্ত রাখিয়া শিক্ষা পাইতে পারে, তাহার জয় আমাদিগকে একান্ত প্রযত্নে চেষ্টা করিতে হইবে। ভারতবর্ষ সুদীর্ঘকাল ধরিয়া আমাদের মনের যে প্রকৃতিকে গঠন করিয়াছে, তাহাকে