পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ব্রাহ্মণ।
৩৯

লাভ না করে, এমন সতর্ক পাহারা থাকা চাই। কর্ম্মিদলকে বরাবর ঠিক পথটি দেখাইবার জন্য, কর্ম্মকোলাহলের মধ্যে বিশুদ্ধ সুরটি বরাবর অবিচলিতভাবে ধরিয়া রাখিবার জন্য, এমন এক দলের আবশ্যক, যাহারা যথাসম্ভব কর্ম্ম ও স্বার্থ হইতে নিজেকে মুক্ত রাখিবেন। তাঁঁহারাই ব্রাহ্মণ।

 এই ব্রাহ্মণেরাই যথার্থ স্বাধীন। ইহারাই যথার্থ স্বাধীনতার আদর্শকে নিষ্ঠার সহিত, কাঠিন্যের সহিত সমাজে রক্ষা করেন। সমাজ ইহাদিগকে সেই অবসর, সেই সামর্থ, সেই সম্মান দেয়। ইহাদের এই মুক্তি, ইহা সমাজেরই মুক্তি। ইহারা যে সমাজে আপনাকে মুক্তভাবে রাখেন, ক্ষুদ্র পরাধীনতায় সে সমাজের কোন ভয় নাই, বিপদ্‌ নাই। ব্রাহ্মণ-অংশের মধ্যে সে সমাজ সর্ব্বদা আপনার মনের, আপনার আত্মার স্বাধীনতা উপলব্ধি করিতে পারে। আমাদের দেশের বর্তমান ব্রাহ্মণগণ যদি দৃঢ়ভাবে, উন্নতভারে, অলুব্ধভাবে সমাজের এই পরমধনটি রক্ষা করিতেন, তবে ব্রাহ্মণের অবমাননা সমাজ কখনই ঘটিতে দিত না এবং এমন কথা কখনই বিচারকের মুখ দিয়া বাহির হইতে পারিত না যে, ভদ্র ব্রাহ্মণকে পাদুকাঘাত করা তুচ্ছ ব্যাপার। বিদেশী হইলেও বিচারক মানী ব্রাহ্মণের মান আপনি বুঝিতে পারিতেন।

 কিন্তু যে ব্রাহ্মণ সাহেবের আফিসে নত মস্তকে চাক্‌রি করে—যে ব্রাহ্মণ আপনার অবকাশ বিক্রয় করে, আপনার মহান্ অধিকারকে বিসর্জন দেয়—যে ব্রাহ্মণ বিদ্যালয়ে বিদ্যাবণিক্‌, বিচারালয়ে বিচার-ব্যবসায়ী, যে ব্রাহ্মণ পয়সার পরিবর্ত্তে আপনার ব্রাহ্মণ্যকে ধিক্কৃত করিয়াছে, সে আপন আদর্শ রক্ষা করিবে কি করিয়া, সমাজ রক্ষা করিবে কি করিয়া, শ্রদ্ধার সহিত তাহার নিকট ধর্মের বিধান লইতে যাইব কি বলিয়া? সে ত সর্ব সর্ব্বসাধারণের সহিত সমানতারে মিশিয়া ঘর্ম্মাক্তকলেবরে কাড়াকাড়ি-ঠেলাঠেলির কাছে ভিড়িয়া গেছে। ভক্তির