পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৪২
ভারতবর্ষ।

নির্ম্মাণ করিয়া তুলিবার ব্যয় ও চেষ্টা স্বীকার করিতে সহজেই অপ্রবৃত্তি জন্মে।

 প্রাচীনকালে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য দ্বিজ ছিল, অর্থাৎ সমস্ত আর্য্য সমাজই দ্বিজ ছিল—শূদ্র বলিতে যে সকল লোককে বুঝাইত, তাহারা সাঁওতাল, ভিল, কোল, ধাঙড়ের দলে ছিল। আর্য্যসমাজের সহিত তাহাদের শিক্ষা, রীতিনীতি ও ধর্ম্মের সম্পূর্ণ ঐক্যস্থাপন একেবারেই অসম্ভব ছিল। কিন্তু তাহাতে কোন ক্ষতি ছিল না, কারণ সমস্ত আর্য্যসমাজই দ্বিজ ছিল—অর্থাৎ সমস্ত আর্য্যসমাজের শিক্ষা একইরূপ ছিল। প্রভেদ ছিল কেবল কর্ম্মে। শিক্ষা একই থাকায় পরস্পর পরস্পরকে আদর্শের বিশুদ্ধিরক্ষায় সম্পূর্ণ আনুকূল্য করিতে পারিত। ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্য, ব্রাহ্মণকে ব্রাহ্মণ হইতে সাহায্য করিত, এবং ব্রাহ্মণও ক্ষত্রিয়-বৈশ্যকে ক্ষত্রিয়-বৈশ্য হইতে সাহায্য করিত। সমস্ত সমাজের শিক্ষার আদর্শ সমান উন্নত না হইলে, এরূপ কখনই ঘটিতে পারে না।

 বর্তমান সমাজেরও যদি একটা মাথার দরকার থাকে, সেই মাথাকে যদি উন্নত করিতে হয় এবং সেই মাথাকে যদি ব্রাহ্মণ বলিয়া গণ্য করা যায়, তবে তাহার স্কন্ধকে ও গ্রীবাকে একেবারে মাটির সমান করিয়া রাখিলে চলিবে না। সমাজ উন্নত না হইলে তাহার মাথা উন্নত হয় না, এবং সমাজকে সর্ব্বপ্রযত্নে উন্নত করিয়া রাখাই সেই মাথার কাজ।

 আমাদের বর্ত্তমান সমাজের ভসম্প্রদায়—অর্থাৎ বৈদ্য, কায়স্থ ও বণিক সম্প্রদায়—সমাজ যদি ইহাদিগকে দ্বিজ বলিয়া গণ্য না করে, তবে ব্রাহ্মণের আর উথানের আশা নাই। একপায়ে দাঁড়াইয়া সমাজ বকবৃত্তি করিতে পারে না।

 বৈদ্যেরা ত উপবীত গ্রহণ করিয়াছেন। মাঝে মাঝে কায়স্থের বলিতেছেন তাঁহারা ক্ষত্রিয়, বণিকেরা বলিতেছেন তাঁহারা বৈশ্য—এ