পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ব্রাহ্মণ।
৪৩

কথা অবিশ্বাস করিবার কোন কারণ দেখি না। আকার-প্রকার, বুব্ধি ও ক্ষমতা, অর্থাৎ আর্যত্বের লক্ষণে বর্তমান ব্রাহ্মণের সহিত ইহাদের প্রভেদ নাই। বঙ্গদেশের যে কোন সভায় পৈতা না দেখিলে, ব্রাহ্মণের সহিত কায়স্থ, সুবর্ণবণিক প্রভৃতিদের তফাৎ করা অসম্ভব। কিন্তু যথার্থ অনার্য, অর্থাৎ ভারতবর্ষীয় বন্যজাতির সহিত তাঁহাদের তফাৎ করা সহজ। বিশুদ্ধ আর্যরক্তের সহিত অনার্যরক্তের মিশ্রণ হইয়াছে, তাহা আমাদের বর্ণে, আকৃতিতে, ধর্মে, আচারে ও মানসিক দুর্বলতায় স্পষ্ট বুঝা যায়–কিন্তু সে মিশ্রণ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, সকল সম্প্রদায়ের মধ্যেই হইয়াছে।

  তথাপি, এই মিশ্রণ এবং বৌদ্ধযুগের সামাজিক অরাজকতার পরেও সমাজ ব্রাহ্মণকে একটা বিশেষ গণ্ডী দিয়া রাখিয়াছে। কারণ, আমাদের সমাজের যেরূপ গঠন, তাহাতে ব্রাহ্মণকে নহিলে তাহার সকল দিকেই বাধে, আত্মরক্ষার জন্য যেমন-তেমন করিয়া ব্রাহ্মণকে সংগ্রহ করিয়া রাখা চাই। আধুনিক ইতিহাসে এমনও দেখা যায়, কোন কোন স্থানে বিশেষ প্রয়োজনবশত রাজা পৈতা দিয়া একদল ব্রাহ্মণ তৈরি করিয়াও লইয়াছেন। বাংলাদেশে যখন ব্রাহ্মণেরা আচারে, ব্যবহারে, বিদ্যাবুদ্ধিতে ব্রাহ্মণত্ব হারাইয়াছিলেন, তখন রাজা বিদেশ হইতে ব্রাহ্মণ আনাইয়া সমাজের কাজ চালাইতে বাধ্য হইয়াছিলেন। এই ব্রাহ্মণ যখন চারিদিকের প্রভাবে নত হইয়া পড়িতেছিল, তখন রাজা কৃত্রিম উপায়ে কৌলীন্য স্থাপন করিয়া ব্রাহ্মণের নির্বাণোম্মুখ মর্য্যাদাকে খোঁচা দিয়া জাগাইতেছিলেন। অপর পক্ষে, কৌলীন্যে বিরাহসন্ধে যেরূপ বর্বরতার সৃষ্টি করিল, তাহাতে এই কৌলীন্যই বর্ণমিশ্রণের এক গোপন উপায় হইয়া উঠিয়াছিল।

  যাহাই হউক্‌, শাস্ত্রবিহিত ক্রিয়াকর্ম্মরক্ষার জন্য, বিশেষ আবশ্যকতাবশতই সমাজ বিশেষ চেষ্টায় ব্রাহ্মণকে স্বভাবে নির্দিষ্ট করিয়া