পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ব্রাহ্মণ।
৪৫

তখনই জানিব, আধুনিক ব্রাহ্মণও প্রাচীন ব্রাহ্মণের সহিত মিলিত হইয়া ভারতবর্ষীয় সমাজকে সজীবভাবে যথার্থভাবে, অখণ্ডভাবে এক করিবার কার্য্যে সফল হইবেন। নহিলে কেবল স্থানীয় কলহ-বিবাদ-দলাদলি লইয়া বিদেশী প্রভাবের সাংঘাতিক অভিঘাত হইতে সমাজকে রক্ষা করা অসম্ভব হইবে, নহিলে ব্রাহ্মণের সম্মান অর্থাৎ আমাদের সমস্ত সমাজের সম্মান ক্রমে তুচ্ছ হইতে তুচ্ছতম হইয়া আসিবে।

 আমাদের সমস্ত সমাজ প্রধানতই দ্বিজসমাজ; ইহা যদি না হয়, সমাজ যদি শূদ্রসমাজ হয়, তবে কয়েকজনমাত্র ব্রাহ্মণকে লইয়া এ সমাজ যুরোপীয় আদর্শেও খর্ব্ব হইবে, ভারতবর্ষীয় আদর্শেও খর্ব্ব হইবে।

 সমস্ত উন্নত সমাজই সমাজস্থ লোকের নিকট প্রাণের দাবী করিয়া থাকে, আপনাকে নিকৃষ্ট বলিয়া স্বীকার করিয়া আরামে জড়ত্ব-সুখভোগে যে সমাজ আপনার অধিকাংশ লোককে প্রশ্রয় দিয়া থাকে, সে সমাজ মরে, এবং না-ও যদি মরে, তবে তাহার মরাই ভাল।

 য়ুরোপ কর্ম্মের উত্তেজনায়, প্রবৃত্তির উত্তেজনায় সর্ব্বদাই প্রাণ দিতে প্রস্তুত—আমরা যদি ধর্ম্মের জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত না হই, তবে সে প্রাণ অপমানিত হইতে থাকিলে অভিমান প্রকাশ করা আমাদের শোভা পায় না।

 য়ুরোপীয় সৈন্য যুদ্ধানুরাগের উত্তেজনায় ও বেতনের লোভে ও গৌরবের আশ্বাসে প্রাণ দেয়, কিন্তু ক্ষত্রিয় উত্তেজনা ও বেতনের অভাব ঘটিলেও যুদ্ধে প্রাণ দিতে প্রস্তুত থাকে। কারণ, যুদ্ধ সমাজের অত্যাবশ্যক কর্ম্ম, এক সম্প্রদায় যদি নিজের ধর্ম্ম বলিয়াই সেই কঠিন কর্ত্তব্যকে গ্রহণ করেন, তবে কর্ম্মের সহিত ধর্ম্মরক্ষা হয়। দেশসুদ্ধ সকলে মিলিয়াই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হইলে মিলিটারিজমের প্রাবল্যে দেশের গুরুতর অনিষ্ট ঘটে।

 বাণিজ্য সমাজরক্ষার পক্ষে অত্যাবশ্যক কর্ম্ম। সেই সামাজিক