পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৪৮
ভারতবর্ষ

 সকল পুরাতন ও বৃহৎ আদর্শের মধ্যেই বিনাশ ও রক্ষার একটি সামঞ্জস্য আছে। অর্থাৎ তাহার যে শক্তি বাড়াবাড়ি করিয়া মরিতে চায়, তাহার অন্যশক্তি তাহাকে সংযত করিয়া রক্ষা করে। আমাদের শরীরেও যন্ত্রবিশেষের যতটুকু কাজ প্রয়োজনীয়, তাহার অতিরিক্ত অনিষ্টকর, সেই কাজটুকু আদায় করিয়া সেই অকাজটুকুকে বহিষ্কৃত করিবার ব্যবস্থা আমাদের শরীরতন্ত্রে রহিয়াছে; পিত্তের দরকারটুকু শরীর লয়, অদরকারটুকু বর্জ্জন করিবার ব্যবস্থা করিতে থাকে।

 এই সকল সুব্যবস্থা অনেকদিনের ক্রিয়া-প্রক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দ্বারা উৎকর্ষ লাভ করিয়া সমাজের শারীরবিধানকে পরিণতি দান করিয়াছে। আমরা অন্যের নকল করিবার সময় সেই সমগ্র স্বাভাবিক ব্যবস্থাটি গ্রহণ করিতে পারি না। সুতরাং অন্য সমাজে যাহা ভাল করে, নকলকারীর সমাজে তাহাই মন্দের কারণ হইয়া উঠে। য়ুরোপীয় মানবপ্রকৃতি সুদীর্ঘকালের কার্য্যে যে সভ্যতাবৃক্ষটীকে ফলবান্ করিয়া তুলিয়াছে, তাহার দুটো-একটা ফল চাহিয়া-চিন্তিয়া লইতে পারি, কিন্তু সমস্ত বৃক্ষকে আপনার করিতে পারি না। তাহাদের সেই অতীত কাল আমাদের অতীত।

 কিন্তু আমাদের ভারতবর্ষের অতীত যদি-বা যত্নের অভাবে আমা-দিগকে ফল দেওয়া বন্ধ করিয়াছে, তবু সেই বৃহৎ অতীত ধ্বংস হয় নাই, হইতে পারে না,–সেই অতীতই ভিতরে থাকিয়া আমাদের পরের নকলকে বারংবার অসঙ্গত ও অকৃতকার্য্য করিয়া তুলিতেছে। সেই অতীতকে অবহেলা করিয়া যখন আমরা নূতনকে আনি, তখন অতীত নিঃশব্দে তাহার প্রতিশোধ লয়–নূতনকে বিনাশ করিয়া পচাইয়া বায়ু দূষিত করিয়া দেয়। আমরা মনে করিতে পারি, এইটে আমাদের নূতন দরকার, কিন্তু অতীতের সঙ্গে সম্পূর্ণ আপোষে যদি রফা-নিষ্পত্তি না করিয়া লইতে পারি, তবে আবশ্যকের দোহাই পাড়িয়াই