পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ব্রাক্ষণ।
৫১

জ্ঞান-বিজ্ঞানকে বহুতর ভাগে বিভক্ত-বিচ্ছিন্ন করিয়া তুলিয়া বিহ্বলবুদ্ধিতে তাহার মধ্যে সম্প্রতি ঐক্য সন্ধান করিয়া ফিরিতেছে—ভারতবর্ষের সেই ব্রাহ্মণ কোথায়, যিনি স্বভাবসিদ্ধ প্রতিভাবলে, অতি অনায়াসেই সেই বিপুল জটিলতার মধ্যে ঐক্যের নিগূঢ় সরলপথ নির্দ্দেশ করিয়া দিবেন? সেই ব্রাহ্মণকে ভারতবর্ষ নগরকোলাহল ও স্বার্থসংগ্রামের বাহিরে তপোবনে ধ্যানাসনে অধ্যাপকের বেদীতে আহ্বান করিতেছে,—ব্রাহ্মণকে তাহার সমস্ত অবমাননা হইতে দূরে আকর্ষণ করিয়া ভারতবর্ষ আপনার অবমাননা দূর করিতে চাহিতেছে। বিধাতার আশির্ব্বাদে ব্রাহ্মণের পাদুকাঘাতলাভ হয় ত ব্যর্থ হইবে না—নিদ্রা অত্যন্ত গভীর হইলে এইরূপ নিষ্ঠুর আঘাতেই তাহা ভাঙ্গাইতে হয়। য়ুরোপের কর্ম্মিগণ কর্ম্মজালে জড়িত হইয়া তাহা হইতে নিষ্কৃতির কোন পথ খুঁজিয়া পাইতেছে না, সে নানা দিকে নানা আঘাত করিতেছে,—ভারতবর্ষে যাঁহারা ক্ষাত্রব্রত, বৈশ্যব্রত গ্রহণ করিবার অধিকারী, আজ তাঁহারা ধর্ম্মের দ্বারা কর্ম্মকে জগতে গৌরবান্বিত করুন—তাঁহারা প্রবৃত্তির অনুরোধে নহে, উত্তেজনার অনুরোধে নহে— ধর্মের অনুরোধেই অবিচলিত নিষ্ঠার সহিত ফলকামনায় একান্ত আসক্ত না হইয়া প্রাণ সমর্পণ করিতে প্রস্তুত হউন। নতুবা ব্রাহ্মণ প্রতিদিন শূদ্র, সমাজ প্রত্যহ ক্ষুদ্র এবং প্রাচীন ভারতবর্ষের মাহাত্ম্য, যাহা অটল পর্বতশৃঙ্গের ন্যায় দৃঢ় ছিল, তাহা দুরস্মৃত ইতিহাসের দিক্‌প্রান্তে মেঘের ন্যায়, কুহেলিকার ন্যায় বিলীন হইয়া যাইবে এবং কর্ম্মক্লান্ত একটি বৃহৎ কেরাণীসম্প্রদায় একপাটি বৃহৎ পাদুকা প্রাণপণে আকর্ষণ করিয়া ক্ষুদ্র কৃষ্ণপিপীলিকাশ্রেণীর মত মৃত্তিকাতলবর্ত্তী বিবরের অভিমুখে ধাবিত হওয়াকেই জীবনযাত্রানির্ব্বাহের একমাত্র পদ্ধতি বলিয়া গণ্য করিবে।