পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
চীনেম্যানের চিঠি।
৫৩

গড়াই আমাদের পক্ষে একমাত্র শেয়—এই কথাটা ঠিক নহে,— আমাদের বিচারালয়ে যুগোপকে দাঁড় করাইয়া তাহারে মারাত্মক অনেকগুলি গলদ্ আলোচনা করিয়া দেখিবার আছে, এই বইখানি হইতে সেই ধারণা আমাদের মনে একটু বিশেষ জোর পায়। প্রথমত ভারতবর্ষের সভ্যতা এসিয়ার সভ্যতার মধ্যে ঐক্য পাইয়াছে, ইহাতেও আমাদের বল; দ্বিতীয়ত এসিয়ার সভ্যতার এমন একটি গৌরব আছে, যাহা সত্য বলিয়াই প্রাচীন হইয়াছে, যাহা সত্য বলিয়াই চিরন্তন হইবার অধিকারী, ইহাতেও আমাদের বল।

 সম্প্রতি আমাদের ময়ে একটা চঞ্চলতা জন্মিয়াছে; আমাদের স্বাধীন শক্তি—আমাদের চিরকালের শক্তি কোন্খানে প্রচ্ছন্ন হইয়া আছে, তাহাই সন্ধান করিয়া সেইখানে আশ্রয় লইবার জন্য আমাদের মধ্যে একটা চেষ্টা জাগিয়াছে। বিদেশীর সহিত আমাদের সংঘাত ক্রমশ যতই কঠিন হইয়া উঠিতেছে, স্বদেশকে ততই বিশেষভাবে জানিবার ও পাইবার জন্য আমাদের একটা ব্যাকুলতা বাড়িয়া উঠিতেছে। দেখিতেছি, ইহা কেবল আমাদের মধ্যে নহে। য়ুরোপের সংঘাত সমস্ত সভ্য এসিয়াকেই সজাগ করিতেছে। এসিয়া আজ আপনাকে সচেতনভাবে, সুতরাং সবলভাবে উপলব্ধি করিতে বসিয়াছে। বুঝিয়াছে, ‘আত্মানং বিদ্ধি’—আপনাকে জান—ইহাই মুক্তির উপায়। ‘পরধর্ম্মো ভয়াবহঃ’—পরের অনুকরণেই বিনাশ।

 বস্তুপ্রধান শক্তিপ্রধান সভ্যতার সম্পদ্ আমাদের ইন্দ্রিয়ানকে অভিভূত করিয়া দেয়। তাহার কল দ্রুত চলে, তাহার প্রাসাদ আকাশ স্পর্শ করে, তাহার কামান শতী, তাহার বাণিজ্যজাত জগদ্ব্যাপী—ইহা আমাদের দৃষ্টিকে আচ্ছন্ন ও বুদ্ধিকে ভিত না করিয়া থাকিতে পারে না। কিছু না হৌক্, বিপুলতার একটা গায়ের জোর আছে, সেই জোরকে ঠেলিয়া-উঠিয়া মনকে মোহমুক্ত করা আমাদের