পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৫৪
ভারতবর্ষ।

মত দুর্বলের পক্ষে বড় কঠিন। যদি বিপুলতাগ্রস্ত এই সভ্যতার দিকেই একমাত্র আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করি, তবে তাহাতে আমাদের মানসিক দুর্ব্বলতা কেবল বাড়িতেই থাকে,—এই সভ্যতাকেই একমাত্র আদর্শ বলিয়া বোধ হয়, এবং নিজের সামর্থ্যকে ও সম্পদকে একেবারে নগণ্য বলিয়া গান হয়। ইহাতে স্বচেষ্টা পরান্ত হয়, আত্মগৌরব দূর হয়, ভবিষ্যতের জন্য কোন আশা থাকে না, এবং জড়ত্বের মধ্যে অনায়াসেই আত্মসমর্পণ করিয়া নিরাপত্তির আরামে নিদ্রার অচেতনতায় সমস্ত ভুলিয়া থাকিতে ইচ্ছা হয়।

 বিশেষত আমাদের বর্তমান অবস্থা ধর্ম্মেকর্ম্মে বিদ্যাবুদ্ধিতে অত্যন্ত দীন। য়ুরোপীয় সভ্যতাকে কেবলি নিজের সেই দীনতার সহিত তুলনা করিয়া নিজেদের সম্বন্ধে হতাশ্বাস হইয়া পড়ি।

 এ অবস্থায় প্রথমে আমাদের বুঝিতে হইবে, বস্তুপ্রধান শক্তিপ্রধান সভ্যতাই একমাত্র সভ্যতা নহে, ধর্ম্মপ্রধান মঙ্গলপ্রধান সভ্যতা তাহা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। তাহার পরে, এই শেষোক্ত সভ্যতাই আমাদের ছিল, সুতরাং শেষোক্ত সভ্যতার শক্তি আমাদের প্রকৃতির মধ্যে নিহিত হইয়া আছে, ইহাই জানিয়া আমাদিগকে মাথা তুলিতে হইবে, আমাদিগকে আশা ও আনন্দ লাভ করিতে হইবে। আমরা বর্তমান দুর্গতির মধ্যে নিজেদের বিচ্ছিন্ন ক্ষুদ্র করিয়া রাখিলে, য়ুরোপীয় ব্যাপারের বৃহত্ব আমাদের বুদ্ধিকে দলন-পেষণ করিয়া তাহাকে আপনার চিরদাস করিয়া রাখিরে। সেই বুদ্ধির দাসত্ব, রুচির দাসত্ব আমরা প্রত্যহ অনুভব করিতেছি। প্রাচীন ভারতের সহিত নিজেকে সংযুক্ত করিয়া নিজেকে বড় করিয়া তুলিতে হইবে।

 জড়পদার্থের অপেক্ষা মানুষ জটিল জিনিষ, জড়শক্তি অপেক্ষা মানুষের ইচ্ছাশক্তি দুর্দ্ধর্যতর, এবং বাহ্যসম্পদের অপেক্ষা মুখ অনেক বেশি দুর্লভ। সেই মানুষকে আকর্ষণ করিয়া, তাহার প্রবৃত্তিকে সংযত