পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৫৬
ভারতবর্ষ।

দিকে শাস্ত্রের কথা—পুঁথির প্রমাণ, একদিকে প্রবল শক্তি, আর একদিকে আমাদের দোদুল্যমান বিশ্বাসমাত্র—এ অবস্থায় অসহায় ভক্তিকে ভারতবর্ষের অভিমুখে স্থির করিয়া রাখাই কঠিন।

 এমন সময় আমাদের সেই পুরাতন সভ্যতাকে যদি চীনে ও জাপানে প্রসারিত দেখি, তবে বুঝিতে পারি, মানবপ্রকৃতির মধ্যে তাহার একটা বৃহৎ স্থান আছে, তাহা কেবল পুঁথির বচনমাত্র নহে। যদি দেখি, চীন ও জাপান সেই সভ্যতার মধ্যে সার্থকতা অনুভব করিতেছে, তবে আমাদের দীনতার অগৌরব দূর হয়, আমাদের ধনভাণ্ডার কোন্‌খানে, তাহা বুঝিতে পারি।

 য়ুরোপের বন্যা জগৎ প্লাবিত করিতে ছুটিয়াছে, তাই আজ সভ্য এসিয়া আপনার পুরাতন বাঁধগুলিকে সন্ধান ও তাহাদিগকে দৃঢ় করিবার জন্য উদ্যত। প্রাচ্যসভ্যতা আত্মরক্ষা করিবে। যেখানে তাহার বল, সেইখানে তাহাকে দাঁড়াইতে হইবে। তাহার বল ধর্ম্মে, তাহার বল সমাজে। তাহার ধর্ম্ম ও তাহার সমাজ যদি আপনাকে ঠেকাইতে না পারে, তবে সে মরিল। য়ুরোপের প্রাণ বাণিজ্যে, পলিটিক্সে—আমাদের প্রাণ অন্যত্র। সেই প্রাণ রক্ষা করিবার জন্য এসিয়া উত্তরোত্তর ব্যগ্র হইয়া উঠিতেছে। এইখানে আমরা একাকী নহি; সমস্ত এসিয়ার সহিত আমাদের যোগ রহিয়াছে। চিনেম্যানের চিঠিগুলি তাহাই প্রমাণ করিতেছে।

 লেখক তাঁহার প্রথম পত্রে লিখিতেছেনঃ–আমাদের সভ্যতা জগতের মধ্যে সব চেয়ে প্রাচীন। অবশ্য ইহা হইতেই প্রমাণ হয় না যে, তাহা সব চেয়ে ভাল;—তেমনি আবার ইহাও প্রমাণ হয় না যে, তাহা সব চেয়ে মন্দ। এই প্রাচীনত্বের খাতিরে অন্তত এটুকুও স্বীকার করিতে হইবে যে, আমাদের আচার-অনুষ্ঠান আমাদিগকে যে একটা স্থায়িত্বের আশ্বাস দিয়াছে, য়ুরোপের কোন জাতির মধ্যে তাহা খুঁজিয়া