পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
চীনেম্যানের চিঠি।
৬১

 তোমরা চাও, আমরাও ব্যবসাদার হই এবং আমাদের রাষ্ট্রীয় ও আর্থিক যে স্বাধীনতা আছে, তাহা বিসর্জ্জন দিই; কেবল যে আমাদের সমস্ত কাজকারবার উলট্‌পালট্‌ করিয়া দিই, তাহা নহে, আমাদের আচার-ব্যবহার, ধর্ম্ম, আমাদের সাবেক রীতিনীতি, সমস্তই বিপর্য্যস্ত করিয়া ফেলি। এমত অবস্থায়, তোমাদের দশাটা কি হইয়াছে, তাহা যদি বেশ করিয়া আলোচনা করিয়া দেখি, তবে আশা করি, মাপ করিবে।

 যাহা দেখা যায়, সেটা ত বড় উৎসাহজনক নহে। প্রতিযোগিতানামক একটা দৈত্যকে তোমরা ছাড়িয়া দিয়াছ, এখন আর সেটাকে কিছুতেই কায়দা করিতে পারিতেছ না। তোমাদের গত একশো বৎসরের বিধি-বিধান কেবল এই আর্থিক বিশৃঙ্খলাকে সংযত করিবার জন্য অবিশ্রাম নিষ্ফল চেষ্টামাত্র। তোমাদের গরিবেরা, মাতালেরা, অক্ষমেরা, তোমাদের পীড়া ও জরাগ্রস্তগণ একটা বিভীষিকার মত তোমাদের ঘাড়ে চাপিয়া আছে। মানুষের সহিত সমস্ত ব্যক্তিগত বন্ধন তোমরা ছেদন করিয়া বসিয়া আছ, এখন ষ্টেট্‌ অর্থাৎ সরকারের অব্যক্তিক উদ্যমের দ্বারা তোমরা ব্যক্তির সমস্ত কাজ সারিয়া লইবার বৃথা চেষ্টা করিতেছ। তোমাদের সভ্যতার প্রধান লক্ষণ দায়িত্ববিহীনতা। তোমাদের কারবারের সর্ব্বত্রই তোমরা ব্যক্তির জায়গায় কোম্পানি এবং মজুরের জায়গায় কল বসাইতেছ। মুনফার চেষ্টাতেই সকলে ব্যস্ত—শ্রমজীবীর মঙ্গলের ভার কাহারই নহে, সেটা সরকারের। সরকার সেটাকে সামলাইয়া উঠিতে পারেন না। সহস্রক্রোশ দূরে যদি দুর্ভিক্ষ হয়, যদি কোথাও মাশুলের কোন পরিবর্তন হয়, তবে তোমাদের লক্ষ লোকের কারবার বিশ্লিষ্ট হইবার জো হয়—যাহার উপরে তোমাদের হাত নাই, তাহার উপরে তোমাদিগকে নির্ভর করিতে হয়। তোমাদের মূলধন একটা সজীব পদার্থ, সেটা খোরাকের