পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৬২
ভারতবর্ষ।

জন্য সর্ব্বদাই চীৎকার করিতেছে; তাহাকে আহার না জোগাইলে সে তোমাদের গলা চাপিয়া ধরে। তোমরা যে উৎপন্ন কর, সেটা ইচ্ছামত নহে, অগত্যা, এবং তোমরা যে কিনিয়া থাক, সেটা যে চাও বলিয়া, তাহা নহে, সেটা তোমাদের ঘাড়ের উপর আসিয়া পড়ে বলিয়া। এই যে বাণিজ্যটাকে তোমরা মুক্ত বল, ইহার মত বদ্ধ বাণিজ্য আর নাই। কিন্তু ইহা কোন বিবেচনাসঙ্গত ইচ্ছার দ্বারা বদ্ধ নহে, ইহা আকস্মিক খেয়ালের স্তূপাকার মূঢ়তার দ্বারা বন্দীকৃত।

 চীনেম্যানের চক্ষে তোমাদের দেশের ভিতরকার আর্থিক অবস্থা এইরকমই ঠেকে। পররাষ্ট্রের সহিত তোমাদের বাণিজ্যসম্বন্ধ, সে-ও অত্যন্ত উল্লাসজনক নয়। পঞ্চাশবৎসর পূর্বে ধারণা হইয়াছিল যে, বিভিন্ন জাতির মধ্যে যখন বাণিজ্যসম্বন্ধ স্থাপিত হইবে, তখন শান্তির সত্যযুগ আসিবে। কাজে দেখা গেল, সমস্তই উল্টা। প্রাচীনকালের রাজাদের অত্যাকাঙ্ক্ষা ও ধর্মযাজকদের গোঁড়ামীর চেয়ে এই বাণিজ্যস্থান লইয়া পরস্পর টানাটানিতে যুদ্ধবিগ্রহের সম্ভাবনা আরো বেশি প্রবল হইয়া উঠিতেছে। পৃথিবীর যেখানেই একটুখানি অপরিচিত স্থান ছিল, সেইখানেই য়ুরোপের লোক একেবারে ক্ষুধিত হিংস্রজন্তুর মত হুঙ্কার দিয়া পড়িতেছে। এখন য়ুরোপের এলাকার সীমানার বাহিরে এই লুণ্ঠনব্যাপার চলিতেছে। কিন্তু যতক্ষণ ভাগাভাগি চলিতেছে, ততক্ষণ পরস্পরের প্রতি পরস্পর কট্‌মট্‌ করিয়া তাকাইতেছে। আজ হৌক্‌ বা কাল হৌক্‌, যখন আর বাটোয়ারা করিবার জন্য কিছুই বাকি থাকিরে না, তখন তাহারা পরস্পরের ঘাড়ের উপরে গিয়া পড়িবে। তোমাদের শস্ত্রসজ্জার এই আসল তাৎপর্য—হয় তোমরা অন্যকে গ্রাস করিবে, নয় অন্যে তোমাদিগকে গ্রাস করিবে। যে বাণিজ্যসম্পর্ককে তোমরা শান্তির বন্ধন মনে করিয়াছিলে, তাহাই তোমাদিগকে পরস্পরের গলাকাটাকাটির প্রতিযোগী করিয়া তুলিয়াছে