পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৭০
ভারতবর্ষ।

ব্রহ্মলাভের সোপান বলিয়াই আমরা তাহা লইয়া গৌরব করি। বাস-নাকে ছোট করিলে আত্মাকেই বড় করা হয়, এইজন্যই আমরা বাসনা খর্ব্ব করি—সন্তোষ অনুভব করিবার জন্য নহে। য়ুরোপ মরিতেও রাজি আছে, তবু বাসনাকে হোট করিতে চায় না, আমরাও মরিতেও রাজি আছি, তবু আত্মাকে তাহার চরমগতি-পরমসম্পদ্ হইতে বঞ্চিত করিয়া ছোট করিতে চাই না। দুর্গতির দিনে ইহা আমরা বিস্মৃত হইয়াছি—সেই সমাজ আমাদের এখনো আছে, কিন্তু তাহার ভিতর দিয়া ব্রহ্মাভিমুখী মোক্ষাভিমুখী বেগবতী স্রোতোধারা 'যেনাহং নামৃতা স্যাং কিমহং তেন কুর্য্যাম' এই গান করিয়া ধাবিত হইতেছে না—

মালা ছিল তার ফুলগুলি গেছে,
রয়েছে ডাের।

 সেইজন্য আমাদের এতদিনকার সমাজ আমাদিগকে বল দিতেছে, গৌরব দিতেছে না, আধ্যাত্মিকতার দিকে আমাদিগকে অগ্রসর করিতেছে না, আমাদিগকে চতুর্দ্দিকে প্রতিহত করিয়া রাখিয়াছে। এই সমাজের মহৎ উদ্দেশ্য যখন আমরা সচেতনভাবে বুঝিব, ইহাকে সম্পূর্ণ সফল করিবার জন্য যখন সচেষ্টভাবে উদ্যত হইব, তখনই মূহুর্ত্তের মধ্যে বৃহৎ হইব, মুক্ত হইব, অমর হইব—জগতের মধ্যে আমাদের প্রতিষ্ঠা হইবে, প্রাচীন ভারতের তপোবনে ঋষিরা যে যজ্ঞ করিয়াছিলেন, তাহা সফল হইবে, এবং পিতামহগণ আমাদের মধ্যে কৃতার্থ হইয়া আমাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিবেন।